যে হারে করোনাভাইরাসের রোগী বাড়ছে, তাতে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল বানিয়ে ফেললেও কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন ১০টি আইসিইউ বেডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা রোগীদের জন্য আরও ২ হাজার ৫০০ বেড যুক্ত করা হবে। কাল বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নতুন ১ হাজার বেড বাড়ানো হবে। তার মানে, নতুন করে সাড়ে ৩ হাজার বেড বাড়ানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের উৎপত্তির উৎস বন্ধ না করলে শুধু সেবা দিয়ে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে ঢাকা শহরকে হাসপাতালে পরিণত করলেও সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বুধবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন রেকর্ডসংখ্যক ৫ হাজার ৩৫৮ জন। মারা গেছেন ৫২ জন।
এর মধ্য দিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার পার হয়ে গেছে। শনাক্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।
এমন বাস্তবতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন যদি ৫০০ থেকে ১ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে, তাহলে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল করে ফেললেও রোগী রাখার জায়গা দেওয়া যাবে না। এ জন্য যা করার এখনই করতে হবে।
‘এই মুহূর্তে যা করতে হবে তা হচ্ছে, যে যে স্থান থেকে করোনা সৃষ্টি হচ্ছে সেই সকল স্থানে এখনই জরুরি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাইকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১৮টি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।’
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিতে সম্প্রতি ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ করা। এ ছাড়া গণপরিবহনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে বলা হয়েছে।
আইসিইউ বেডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আগুন লাগার পর রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার সময় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
‘১৪টি আইসিইউ নষ্ট হয় যায়। দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আবার ১০টি নতুন আইসিইউ চালু করতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য একটা সুসংবাদ।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু করা নতুন ১০টি আইসিইউ।
তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীর সাথে সাথে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এটা স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ। আপনারা জানেন গত এক বছর যাবৎ আমাদের ডাক্তার ও নার্সরা ছুটিতে যাচ্ছে না। তারা পরিশ্রান্ত হয়ে গেছে। তাদের কখনো আমরা ছুটি দিইনি।’
স্বাস্থ্যবিধিতে জোর মন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যতটুকু সামর্থ্য আছে করছি…সবকিছুর একটা সীমা আছে। আজকে আমরা যেভাবে, বেখেয়ালিভাবে চলাফেরা করছি, যদি আমরা চলাফেরা করি, তাহলে আগামী দিনগুলোতে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। এখনই সময় পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা।’
সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সজাগ হতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে; সরকারের দেওয়া ১৮টি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এটা নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য।
‘আমি সুস্থ না থাকলে দেশ সুস্থ থাকবে না। এক বছর করোনা নিয়ে কাজ করছি। আমরা সুন্দরভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছি।’
করোনা নিয়ন্ত্রণের সফলতার কারণে দেশের সুনাম এসেছিল মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘তবে আমাদের খুশি কাল হয়েছে। গত চার মাসে করোনা যে হারে না বেড়েছে, গত এক সপ্তাহে তার থেকে বেশি বেড়েছে।
‘করোনার শনাক্তের হার ২ শতাংশে নেমে আসছিল। গত এক সপ্তাহে ২০ শতাংশের উপরে ছাড়াইছে।’
তিনি বলেন, করোনায় মৃত্যু ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সব হাসপাতালের রোগী বেড়ে গেছে। রোগী বাড়ার কারণ কী, সে বিষয়ে জনগণকে অবহিত হতে হবে; নিজেকে নিজের রক্ষা করতে হবে।