বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পেছনে ইউকে স্ট্রেইন?

  •    
  • ২৯ মার্চ, ২০২১ ০৮:৩১

দেশে রোগীদের অনেকের শরীরে ইউকে স্ট্রেইন পাওয়া যাচ্ছে। নতুন ধরন তরুণদের আক্রান্ত করছে। আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কারও ক্ষেত্রে ফুসফুস, আবার কারও গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজিক্যাল সিস্টেমগুলো মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের সঙ্গে দেশে ১০ জনের শরীরে পাওয়া ভাইরাসের মিল পাওয়া গেছে– স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন ঘোষণার পর থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে নতুন স্ট্রেইনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্তি মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এখন যে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, এতে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের অবশ্যই প্রভাব রয়েছে। তবে শুধু ইউকে ভ্যারিয়েন্ট নয়, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না বলেও সংক্রমণ বাড়ছে।’

যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আগেরটির চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। নতুন ওই স্ট্রেইন দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নতুন স্ট্রেইনকে টিকাও রুখতে পারে না। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন গবেষকরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘করোনার নতুন ধরন একটু ভিন্ন। আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। নতুন ধরনে কারও ক্ষেত্রে ফুসফুস, আবার কারও গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজিক্যাল সিস্টেমগুলো মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়। তখন দ্রুততম সময়ে চিকিৎসার আওতায় নেয়া প্রয়োজন হয়। এ জন্য হাসপাতালগুলোকে জোরদার প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশকেই আইসিইউতে নিতে হচ্ছে। এমনকি তাদের একটা বড় অংশ তরুণ।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউয়ের ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, হাসপাতালের আইসিইউ বেডে এখন আগের চেয়ে বেশি তরুণরা ভর্তি হচ্ছেন।

ভাইরাসটি নিজ নিজ দেশে যাতে না ঢোকে, সেই চেষ্টাতেই এখন ব্যস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। অথচ বাংলাদেশে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। কেবল যুক্তরাজ্য থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে সাত দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকাসহ কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংক্রমণের মাত্রা বাড়ার পেছনে নতুন স্ট্রেইনও কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘টোটাল ১০ জনের মধ্যে (ইউকে ভ্যারিয়েন্ট) পেয়েছি। তারা সবাই যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা। তারা ঢাকায় ও সিলেটে অবস্থান করছেন। তাদের সবাইকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল।’

করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিচ্ছেন এক তরুণী। ছবি: সাইফুল ইসলাম

আলমগীর বলেন, ‘জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা বেশ কয়েকটি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট আইডেন্টিফাই করি। ইউকেতে যে ভ্যারিয়েন্ট, তা হুবহু ছিল। এই পেশেন্টরা আমাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ইউকের মতো আমাদের এখানে স্প্রেডিং দেখিনি।’

নতুন ধরনটি দেশে ছড়ানোর বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইউকে থেকে যারা আসছে, তাদের প্রত্যেককে টেস্ট করিয়ে যাদের পজিটিভ আসছে, তাদের স্যাম্পল সিকুয়েন্সিং করছি। এটা করেই আমরা কয়েকটি পেয়েছি। সেটা অব্যাহত রয়েছে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে তারা যাদের কন্ট্রাক্টে এসেছে, তাদের ফলোআপে ১৪ দিন রেখে আমরা রেপিডেট টেস্ট করিয়েছি। তেমন কিছু পাইনি। আমরা এই ভ্যারিয়েন্টটির সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছি।’

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) জিনোম ল্যাবের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে করোনার নতুন স্ট্রেইনের সন্ধান মিলেছে অনেক আগেই। ব্রিটেন থেকে আসা কিছু লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এটি দ্রুততম সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দুর্বল করে ফেলে।’

তবে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার পেছনে নতুন স্ট্রেইনকে দায়ী করার মতো সিদ্ধান্তে এখনই যাওয়া ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম।

সম্প্রতি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে তরুণদের ভিড় বেড়েছে। ছবিটি রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল থেকে তুলেছেন সাইফুল ইসলাম

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা হয়েছে। তারা যেটা বলছে, হয়তো ঠিক হতে পারে। তবে আমাদের দেশে এ নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। তবে এটা বলা যায়, করোনা রোগীদের আগের থেকে বেশি আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় আইসিইউ নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিলেও সেটার কোনো বাস্তবায়ন এখন চোখে পড়েনি। এখনও অনেক জেলায় আইসিইউ ব্যবস্থা করা হয়নি।’

দেশে সবচেয়ে বড় সরকারি চিকিৎসা সেবাদান প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন ‘আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি। আপনি বলতে পারেন, এখনকার রোগীদের অবস্থা অনেক বেশি গুরুতর। আইসিইউ চিকিৎসাধীনদের বড় একটি অংশ তরুণ। যা আগে কখনই এমন পরিস্থিতি দেখিনি।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালনক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘নতুন ধরনের স্ট্রেইন নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে করোনায় কখনও কোনো বয়সের প্রটেকশন ছিল না। এই কারোনা ভাইরাস যেকোনো বয়সী মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। যে বেশি সংস্পর্শে আসবে, তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

‘এখন সব বয়সীরা বাইরে বের হচ্ছে, তাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ইউকে ভ্যারিয়েট কিছু কিছু পাওয়া যাচ্ছে। সংক্রমণ বাড়তে অবশ্যই নতুন স্ট্রেইন ভূমিকা রাখছে।’

এ বিভাগের আরো খবর