অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচিতে আবার অনিশ্চয়তা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এখনও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি আর বিষয়টি গণমাধ্যমের সুবাদে জেনেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ফলে তারা বিষয়টি নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয়।
গত জানুয়ারির শুরুতেও গণমাধ্যমে একবার সংবাদ আসে যে সিরামের টিকা রপ্তানি করবে না ভারত। সে সময় বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। কিন্তু পরে সে গুঞ্জন আর সত্য প্রমাণ হয়নি।
বাংলাদেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে যে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তাতে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে।
সরকার ভারতের সিরাম থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা কিনেছে। এর মধ্যে ৭০ লাখ এর মধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। আর ভারত সরকার উপহার হিসেবে দিয়েছে ২০ লাখ টিকা।
ফেব্রুয়ারিতে যাদেরকে টিকা দেয়া হয়েছে, তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে ৮ এপ্রিল থেকে। ফলে এখন পর্যন্ত তাদেরকে টিকা দেয়া হয়েছে, কেবল তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলেও বাংলাদেশের হাতে পর্যাপ্ত টিকা নেই।
এর বাইরে প্রতি দিন ৭০ হাজার থেকে দেড় লাখ মানুষ টিকা নিচ্ছে। ফলে আগামী ৮ এপ্রিলের আগেই আরও ১০ লাখ টিকা ফুরিয়ে যেতে পারে।
ভারত যদি টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ করে রাখতে হতে পারে।
২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তার মাধ্যমে টিকাদান শুরু হয় দেশে। তবে গণটিকা শুরু হয় আরও ১০ দিন পর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে করোনার টিকা অন্যান্য দেশে রপ্তানি করেনি ভারত। তবে সিরামের লোকাল এজেন্ট বেক্সিমকোর কাছেও কোনো তথ্য নেই।
গত রোববার ব্রিটিশ দৈনিক প্রত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান-এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, সিরাম কর্তৃপক্ষ ব্রাজিল, সৌদি আরব ও মরক্কো সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ওই তিন দেশে তাদের টিকার চালান সরবরাহ দেরি হবে।
এই তিন দেশ ইতিমধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকার প্রথম চালান পেয়েছে এবং দ্বিতীয় চালানের জন্যে অপেক্ষা করছে।
সিরামের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী মাসে ৫০ লাখ করে টিকা আসার কথা। তবে জানুয়ারিতে মাসে ৫০ লাখ দেয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে আসে ২০ লাখ। মার্চের চালান এখনও আসেনি।
২৩ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন, মার্চে টিকার এ ঘাটতি পূরণ করে দেবে সিরাম। তবে এক মাসের বেশি সময় ধরে টিকার কোনো চালান পায়নি দেশ।
রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে টিকা নিতে আসা মানুষের সারি। ফাইল ছবি
হঠাৎ রপ্তনি বন্ধের কারণে বাংলাদেশের টিকা পেতে দেরি হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা বলেন, ‘টিকা রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই।’
তৃতীয় চালান কবে আসবে সেই বিষয়ে তার কার কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি বলেন, ‘তথ্য পেলেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব’।
টিকার নাও আসতে পারে এমন শঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কোভিশিল্ড টিকার আসছে দেশে। এখনা থেকে তিন কোটি টিকা আসবে। ধারাবাহিকভাবেই আসছিল। তবে মার্চ মাসে আসতে একটু দেরিও হতে পারে। ২৬ মার্চ আসবে এমন আশা ব্যক্ত করি। ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসবেন। সেই দিনই হয়ত এই টিকা আসতে পারে। যদি সেদিন না আসে তাহলে হয়ত বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের দিকে আসতে পারে।’
মোদি দেশে আসার সময় উপহার হিসেবে আরও ১২ লাখ টিকা নিয়ে আসছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মাদ খুরশীদ আলমও।
গত ২২ জানুয়ারি ভারত থেকে আসা টিকার প্রথম চালান। সেদিন ২০ লাখ টিকা দেশটি পাঠায় উপহার হিসেবে
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভারতের টিকা রপ্তনি বন্ধ হয়েছে এটা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পরেছি। এ কারণে আমাদের টিকা পেতে দেরি হবে কি না সেটা এই মুহূর্তে কিছুই বলতে পারব না। তবে যতটুকু জানি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশে আসছেন। তার সঙ্গে উপহার হিসেবে ১২ লাখ ডোজ টিকা আসবে।’
বাংলাদেশ সিরাম ছাড়াও বিশ্বজুড়ে ন্যায্যাতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকেও টিকা পেতে যাচ্ছে। এই জোট থেকে ৮ কোটির বেশি টিকা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আপাতত দুই কোটি টিকা পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারিখ সুনির্দিষ্ট না হলেও জুলাইয়ের মধ্যে এই টিকা আসার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার।