করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলে বহুজাতিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা পুরোনো তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে থাকতে পারে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা।
আমেরিকান স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (এনআইএআইডি) মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে।
সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, পেরু ও চিলির ৮৮টি কেন্দ্রে ৩২ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবকের ওপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকার ব্যাপক আকারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়।
সোমবার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, উপসর্গ থাকা অসুস্থতা প্রতিহত করতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ৭৯ শতাংশ কার্যকর। আর গুরুতর অসুস্থ ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো বিভিন্ন জটিলতায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে এটি শতভাগ কার্যকর।
প্রতিবেদনটির ঠিক এক দিন পরই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল এনআইএআইডি।
সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে সম্ভবত পুরোনো তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে তাদের মতামত সে ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ হতে পারে। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ডাটা সেফটি মনিটরিং বোর্ড (ডিএসএমবি)।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘টিকার কার্যকারিতা ডাটা পর্যালোচনা বিষয়ে ডিএসএমবির সঙ্গে কাজ করতে আমরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সবচেয়ে নির্ভুল ও হালনাগাদ ডাটা জনসমক্ষে প্রকাশেরও আহ্বান জানাই।’
এনআইএআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, সোমবার রাতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও বায়োমেডিক্যাল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামের সংস্থার পাশাপাশি তারাও টিকার কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি জানতে পারে।
হোয়াইট হাউজের প্রধান চিকিৎসাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফাউচির নেতৃত্বাধীন এনআইএআইডি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথের অংশ।
মন্তব্য নেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার
এনআইএআইডির বিবৃতির বিষয়ে সিএনবিসিকে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
এদিকে মঙ্গলবার লন্ডনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার শেয়ারের মূল্য এক শতাংশের বেশি কমে যায়।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মাঝ এপ্রিলের আগেই তাদের টিকা জরুরি ব্যবহারে অনুমোদন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে পাঠানো হবে।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার পর ইউরোপে বেশ কয়েকজনের মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার খবর প্রকাশের ওই টিকার কার্যক্রম বন্ধ করে ইউরোপের ১৩টি দেশ।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার পর জটিলতায় পড়া কয়েকজনকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তারা সেরেব্রাল ভেনাস সাইনাস থ্রম্বসিস বা সিভিএসটি নামের রক্ত জমাট বাঁধাজনিত সমস্যায় ভুগছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই নারী এবং তাদের বয়স ৫৫ বছরের নিচে।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের টিকার কারণে রক্ত জমাট বাঁধে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা আরও জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ও ইইউভুক্ত দেশের ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ এ টিকা নিয়েছে। ৮ মার্চের দিকে এদের মধ্যে কেবল ৩৭ জন ব্যক্তি রক্ত জমাটের কথা বলেছেন। যে পরিমাণ মানুষ এ টিকা নিয়েছে, সে তুলনায় এ সংখ্যা নিতান্ত কম।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) টিকাটি নিয়ে পর্যালোচনায় বসে। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করে তারা। সেখানে বলা হয়, রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কোনো সম্পর্ক নেই।
ইএমএর বক্তব্যের পরপরই শুক্রবার জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়।
অন্যদিকে নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ডসহ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ স্থগিত করা ইউরোপের অন্যান্য দেশ জানিয়েছে, ফের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর আগে এ টিকা নিয়ে তারা আরও গবেষণা করবে।