করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ পুরুষের শরীরে নারীর যৌন হরমোন প্রজেস্টেরোন প্রয়োগ করলে কমে আসে অসুস্থতার মাত্রা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের একটি গবেষণায় এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিস্তার ঘটা কোভিড ১৯ নারীর চেয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি জটিলতা তৈরি করে বলে এরই মধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি কোভিড আক্রান্ত নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যু হারও বেশি। এর কারণ খুঁজতে সাম্প্রতিক গবেষণাটি চালান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একদল গবেষক।
এই দলটির ভাষ্য, প্রজেস্টেরোন হরমোনের নির্দিষ্ট কিছু প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহে অনেক সময় রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর ফলে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমিত ভাইরাসকে প্রতিহত করার পরিবর্তে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শ্বাসতন্ত্রের ভালো কোষকেও আক্রমণ করে। এর ফলে জটিল নিউমোনিয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজেস্টেরোন হরমোন ‘সাইটোকাইন স্টর্মস’ নামে পরিচিত দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এই মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াকে কমিয়ে আনতে সক্ষম।
গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের সিডার্স-সিনাই হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট সারা ঘানদেহারি।
সারা বলেন, ‘আমি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চিকিৎসক। করোনায় প্রচণ্ড অসুস্থ, ভেন্টিলেটর প্রয়োজন এমন রোগীদের মধ্যে জেন্ডার অসমতার বিষয়টি আমাকে ভাবায়।’
নারী-পুরুষ উভয়ের দেহে প্রজেস্টেরোন হরমোন উৎপাদন হয়। তবে ঋতুকালে নারীর দেহে এ হরমোন উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, নারীদের মাসিকের আগে-পরে করোনায় অসুস্থতার বৈশিষ্ট্যে মাত্রাগত তারতম্য ঘটে। মাসিকের আগে বেশি প্রজেস্টেরোন হরমোন তৈরি হওয়ায় তখন করোনা শরীরে কম জটিলতা সৃষ্টি করে। তবে এরপর হরমোনটির মাত্রা কম থাকায় আক্রান্তের জটিলতা বেড়ে যায়।
গবেষক দলটি গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়েছে। ওই ট্রায়ালে করোনায় মাঝারি থেকে গুরুতর জটিলতায় ভোগা হাসপাতালে ভর্তি ৪০ জনের মতো পুরুষ অংশ নেন। ট্রায়ালের অংশ হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের দুই দলে ভাগ করা হয়।
দুই দলের মধ্যে এক দলকে শুধু প্রচলিত চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বাকিদের প্রতিদিন দুইবার ১০০ মিলিগ্রাম প্রজেস্টেরোন হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে টানা পাঁচ দিন দেয়া হয়।
সব রোগীকে ১৫ দিন বা হাসপাতাল ছাড়ার আগ পর্যন্ত পর্যলোচনায় রাখে গবেষক দলটি।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সপ্তম দিনে প্রতিটি রোগীকে ক্লিনিক্যাল স্ট্যাটাসের সাত পয়েন্ট স্কেলের মানদণ্ড অনুযায়ী মাপা হয়। এতে দেখা যায়, প্রজেস্টেরোন হরমোন পাওয়া দলটি স্কেলে গড়ে ১.৫ পয়েন্ট বেশি পেয়েছে।
প্রজেস্টেরোন হরমোন পাওয়া দলের রোগীদের সব মিলিয়ে হাসপাতালে কম দিন থাকতে হয়েছে। তাদের পরিপূরক অক্সিজেন ও যান্ত্রিক ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনও পড়েছে কম।
গবেষকেরা বলছেন, প্রজেস্টেরোন ইনজেকশনের ফলে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ১৫ দিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় দুই দল থেকেই দুইজনের মৃত্যু হয়, তবে পরীক্ষামূলক চিকিৎসার সঙ্গে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সারা সতর্ক করে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত পুরুষদের চিকিৎসায় প্রজেস্টেরোন হরমোন ব্যবহার উৎসাহজনক হিসেবে আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে।তবে ট্রায়ালটি হয়েছে তুলনামূলক কম রোগী নিয়ে। প্রাথমিকভাবে শ্বেতাঙ্গ, হিস্পানিক ও স্থুল রোগীদের ওপর এ ট্রায়াল হয়। স্থুল রোগীরা আগে থেকেই শারীরিক কিছু জটিলতায় থাকেন, যা তাদের করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে।’
সারা বলেন, ‘অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রেও পোস্টমেনোপজাল নারীসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের রোগীদের নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া উচিত।
‘এর মাধ্যমে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যাবে। পাশাপাশি প্রজেস্টেরোন হরমোনের মাধ্যমে করোনা চিকিৎসার অন্যান্য সম্ভাব্য নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগও পর্যালোচনা করা যাবে।’