প্রতিরোধী টিকা নিয়েও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা যাচ্ছে না। টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পরও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এই তালিকায় রয়েছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনেকে।
টিকা নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবশেষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার ৪১ দিন পর তিনি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শনিবার করোনা পরীক্ষার জন্য এনামুরের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রোববার ফল পজিটিভ আসে।
প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে সাভারে নিজ নামীয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর আগে টিকা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৮ মার্চ ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
পরে করোনা পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর তাকে প্রথমে করোনা কেবিন ও পরে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ১১ মার্চ মৃত্যু হয় তার।
টিকা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। তিনি সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য।
আক্রান্ত হয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী।
টিকা নেয়ার পর আরও যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মোহসীন, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম ও চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ।
টিকা নিয়ে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় অনেক সাধারণ মানুষও রয়েছেন, যাদের খবর সংবাদমাধ্যমে খুব একটা আসেনি।
টিকা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত হন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম। ফাইল ছবি
শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশেও এমন ঘটনা ঘটছে। টিকা নেয়ার দ্বিতীয় দিনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আক্রান্ত হয়েছেন তার স্ত্রী বুশরা মানেকা বিবিও।
টিকা নিয়েও আক্রান্ত হয়েছেন ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান স্টিফেন ফ্রান্সিস লিঞ্চ।
জার্মানি, ভারতসহ অনেক দেশের বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নেয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে টিকা নেয়ার পরও কেন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
এসব ঘটনায় অবশ্য বিস্মিত হচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।
দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কারিগরি কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, টিকা নেয়ার কত দিন পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, এটা আগে জানা দরকার।
‘এ পর্যন্ত যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারা টিকা নেয়ার ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন। আর আক্রান্ত হওয়ার ১৫ দিন পর এ ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
‘তাই যারা টিকা নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, এদের শরীরে আগে থেকেই ভাইরাস থাকতে পারে। এ জন্যই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি।’
একই মত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহরও।
রোববার তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা নেয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হতে ১৪ থেকে ২১ দিন সময় লাগে। অ্যান্টিবডি তৈরি না হলে অবশ্যই করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। এটা স্বাভাবিক।
‘করোনা প্রতিরোধে ডোজ দিতে হবে দুইটা। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত একটি ডোজ দেয়া হয়েছে। এক ডোজ দিলে পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না। দ্বিতীয় ডোজ দিলে তখন সুরক্ষা বেশি মেলে। তা-ও ১০০ ভাগ নয়; ৯২ শতাংশ সুরক্ষা দেবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম টিকা নেয়ার ৩৯ দিন পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হয়তো উনার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি।’