দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ অনুরোধ জানান সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা আবার নতুনভাবে দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে সকলকে অনুরোধ করব স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলেন, যেটা খুব প্রয়োজন।’
দেশে লম্বা একটা সময় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সংক্রমণ আবার বাড়ছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক দিনে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৯১ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই করোনা শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালা অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণে ধরা যায়। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল টানা আট সপ্তাহের বেশি।
পিছু হটা করোনা গরমের শুরু থেকে বাংলাদেশে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। দিনে ২ হাজারের আশপাশে পাওয়া যাচ্ছে নতুন রোগী, যা গত তিন মাসে দেখা যায়নি।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলো কি না এ ব্যাপারে সরকার থেকে এখনও কিছু বলা না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক নীতিমালা বলছে, বাংলাদেশে আসলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।
সংস্থাটির নীতিমালা অনুযায়ী, যদি টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে তাহলে নতুন ঢেউ আসছে বলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১০ মার্চ থেকে টানা ১০ দিন প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হয়েছে হাজারের ওপরে। শনাক্ত হার থাকছে কখনও ১০ বা এর বেশি বা এই হারের আশপাশে। মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপ-আমেরিকায় আরও বিধ্বংসী হয়েছে। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে বেশি। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগে আবারও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে করোনাভাইরাসটাকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটি আবারও নতুনভাবে দেখা দেয়াতে আবার এই প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে। এর ফলে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারে থেকে আমাদেরও কাজ করতে হবে।’
করোনাকালে যাতে খাদ্য সংকট না হয়, সেজন্য দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে আবাদের আহ্বান সরকারপ্রধানের। বলেন, ‘দেশের কোথায়ও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কারণ করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী যেকোনো সময় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
‘এতে আমাদের দেশের মানুষের যেন কোনো খাদ্য সংকট দেখা না দেয়। আমরা যেন আরও অপরকে সহযোগিতা করতে পারি, সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের যে কষ্ট, সেটা যতদূর সম্ভব আমাদের লাঘব করতে হবে। আমরা সেটা করেছি, আমাদের দেশে সে কাজটা হয়েছে কিন্তু আমাদের সেটা অব্যাহত রাখতে হবে।’