দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় মাস্ক পরার অভ্যাস গড়ে তোলাসহ জনসাধারণের মাঝে অন্যান্য স্বাস্থ্য সচেতনা বাড়াতে তৎপর হয়েছে পুলিশ। এর অংশ হিসেবে দেশব্যাপী ‘মাস্ক পরার অভ্যাস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে বিশেষ কর্মসূচি শুরু করেছে বাহিনীটি।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটনের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। সেখানে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ।
- আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশ
এ সময় তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হয়েছে। আমরা মূলত জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাস্ক বিতরণ করছি। অনেকেই রাস্তায় চলাচল করছে মাস্ক ছাড়া, তাদেরকে মাস্ক বিতরণ করছি।’
হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘মানুষকে মাস্ক পরার অভ্যাস করতে হবে। আপনারা জানেন অনেকেই টিকা নিয়েছেন। এরপরেও আমাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশে মাস্ক বিতরণ করছি।’
দেশে লম্বা একটা সময় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সংক্রমণ আবার বাড়ছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক দিনে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৯১ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই করোনা শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালা অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণে ধরা যায়। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল টানা আট সপ্তাহের বেশি।
দেশে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। ছবি: নিউজবাংলা
পিছু হটা করোনা গরমের শুরু থেকে বাংলাদেশে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। দিনে ২ হাজারের আশপাশে পাওয়া যাচ্ছে নতুন রোগী, যা গত তিন মাসে দেখা যায়নি।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলো কি না এ ব্যাপারে সরকার থেকে এখনও কিছু বলা না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক নীতিমালা বলছে, বাংলাদেশে আসলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।
সংস্থাটির নীতিমালা অনুযায়ী, যদি টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে তাহলে নতুন ঢেউ আসছে বলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১০ মার্চ থেকে টানা ১০ দিন প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হয়েছে হাজারের ওপরে। শনাক্ত হার থাকছে কখনও ১০ বা এর বেশি বা এই হারের আশপাশে। মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপ-আমেরিকায় আরও বিধ্বংসী হয়েছে। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে বেশি। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগে আবারও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গত বছরের মতো এবারও মাস্ক পরতে আইন প্রয়োগ করা হবে কি না এমন প্রশ্নে তেজগাঁও জোনের ডিসি হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা মনে করি তাদের সঠিকভাবে সচেতন করতে পারলে তারা এমনিতেই মাস্ক পরবেন। আইন প্রয়োগের প্রয়োজন হবে না।
‘আমরা থানায়ও মাস্ক বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। কারও মাস্ক দরকার হলে থানায় যাবেন, সেখান থেকে মাস্ক নিয়ে পরতে পারবেন। আমরা চাই অতীতের মতো এবারও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকুক।’
মাস্ক বিতরণ করছে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
পুলিশের এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানাচ্ছে পথচারীরা। ফার্মগেট এলাকায় প্রায় ৫ হাজার মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করে পুলিশ। মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা হ্যান্ড-স্যানিটাইজার ব্যবহারেও সচেতনতা তৈরি করছেন।
হারুন-অর-রশীদ জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মরদেহ সৎকার করছেন পুলিশ সদস্যরা। খাবার বিতরণ করেছেন। এই সংকটকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮৭ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি সদস্য।
দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগর ট্রাফিক বক্স সংলগ্ন পথচারী ও সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করেছে পুলিশ। সেখানে মাস্ক বিতরণ শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন্স) কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘জোর করে কিংবা আইন প্রয়োগ করে নয়; মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে ও সচেতনতা সৃষ্টি করে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে চায় পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহারে আইন প্রয়োগ কিংবা জোর করে মানুষকে বাধ্য করতে চাই না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে ও সচেতনতা সৃষ্টি করে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে চায়। আমরা আশা করছি, সবাই নিজের ঝুঁকি বুঝতে পেরে, বিপদ বুঝতে পেরে নিজ থেকেই সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।’