বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশ

  •    
  • ২০ মার্চ, ২০২১ ২২:২৭

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালা অনুযায়ী টানা দুই সপ্তাহ সংক্রমণ পরীক্ষার বিবেচনায় ৫ শতাংশের নিচে হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে ধরা যায়। বাংলাদেশে টানা আট সপ্তাহের বেশি সংক্রমণ এর নিচে ছিল। নিয়ন্ত্রণে আসার পর টানা দুই সপ্তাহ সংক্রমণ ৫ শতাংশের বেশি হলে দ্বিতীয় ঢেউ ধরা যায়। বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি ১৫ দিন ধরে দেখা যাচ্ছে।

শীত পেরিয়ে এসে বসন্তও প্রায় শেষ। দেশব্যাপী চলছে গণটিকা কর্মসূচি। তবু পিছু ছাড়ছে না করোনা।

বরং গরমের শুরুতেই আবার বাড়ছে সংক্রমণ। দিনে দুই হাজারের আশেপাশে পাওয়া যাচ্ছে নতুন রোগী, যা গত তিন মাসে দেখা যায়নি।

সরকার এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। পরিস্থিতি নজরে রাখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি নীতিমালা বলছে, বাংলাদেশে আসলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।

ডব্লিউএইচওর নীতিমালায় বলা হয়েছে, টানা দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল টানা আট সপ্তাহের বেশি।

তবে ৬ মার্চ এই শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে আসে। এরপর থেকে সেটি আরও বাড়তে থাকে। ডব্লিউএইচওর আরেক নীতিমালা অনুযায়ী, যদি টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে তাহলে নতুন ঢেউ আসছে বলে ধরা হয়।

রাজধানীর একটি হাসপাতালে করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা নেয়া হচ্ছে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১০ মার্চ থেকে টানা ১০ দিন প্রতিদিন রোগি শনাক্ত হয়েছে হাজারের ওপরে।

১৮ মার্চ করোনা শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ১৮৭ জনের শরীরে। শনাক্তের এই সংখ্যা ১০০ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সর্বশেষ গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়। সেদিন করোনা শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ২০২ জনের শরীরে।

শনাক্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও। এক মাস আগেও দিনে পাঁচ থেকে সাতজনের মৃত্যুর তথ্য এলেও সোমবার ২৪ ঘণ্টায় ২৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ৬৭ দিনে এত বেশি মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক দিনে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কমে ২ দশমিক ৯১ শতাংশ হয়। এটি গত বছরের ৪ এপ্রিলের পর ছিল সর্বনিম্ন। ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই করোনা শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে।

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার টানা আট সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে ছিল। ছবি: সাইফুল ইসলাম

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপ আমেরিকায় আরও বেশি বিধ্বংসী হয়েছে। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে বেশি। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগে আবারও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গ্রীষ্ম আসতে না আসতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি কেবল বাংলাদেশে নয়, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। দুটি দেশেই বেশ কিছু শহরে নতুন করে লকডাউন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছুটি বাড়াতে এবং লকডাউনের প্রস্তাব দিলেও এই প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেশে আর লকডাউনের প্রয়োজন হবে না।’

একই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার একদিন পর করোনা আক্রান্ত হয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম। অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানাসহ অধিদপ্তরের অন্তত ২০ কর্মকর্তা-কর্মচারী।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার যে চিত্র তাতে মনে হয় আমাদের দেশে করোনা দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসছে। করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে চলে আসার পর যদি দুই সপ্তাহ বাড়ে, তাহলে তাকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলে।’

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদ জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তার বেশি হবে। সেজন্য আমাদের সর্তক হতে হবে। এটি প্রতিরোধে সরকারেরও জোরেশোরে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা সরকারের কাছে। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই মাস দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিল, যে কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। টিকা নেওয়ার পর অনেকে স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরা ছেড়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানেও মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের দিকে এগোচ্ছি। আর কিছুদিন পরেই বলতে পারব দেশে করোনা দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসবে।’

সোমবার ২৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফাইল ছবি

সরকারের নতুন করে কিছু বিশেষ সতর্কতা জারি করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব জায়গায় জনসমাগম হয়, সেটি রাজনৈতিক ধর্মীয় বা সামাজিক হোক, সবগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। এমনকি এসব অনুষ্ঠান বন্ধে সরকারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এখন বিদেশ থেকে আসছে, তাদের জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করতে হবে। তারা নতুন ধরনের করোনা নিয়ে দেশে প্রবেশ করছে কি না, জানার চেষ্টা করতে হবে।’

লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘শীতের আবহাওয়ায় দেশে জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ থাকে। এদের উপস্থিতির কারণে করোনাভাইরাসের প্রাবল্য কম ছিল। উষ্ণ আবহাওয়ায় অন্য ভাইরাস অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে, এককভাবে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি এখন বেশি। তাই সংক্রমণ বাড়ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিউজবাংলাকে জানান, নতুন ধরনের করোনায় আক্রান্ত ছয় জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ঢেউ পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় সংক্রমণের হার বেড়েছে। পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার হয়ত লকডাউনে যাবে না, তবে কিছু কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর