মহারাজ শেখের বয়স ৮৫। ছিন্নমূল এই বৃদ্ধের দিন কাটে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামের এক অবস্থাপন্ন ব্যক্তির আশ্রয়ে। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত মহারাজ কয়েকদিন ধরে রোজ শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় সেবা পাচ্ছেন না।
শরণখোলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেল ভোলার পাড় গ্রামের আব্দুল মান্নান শিকদার ও কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা হামিদ হাওলাদারকে। নিউজবাংলাকে তারা জানান, ফি পরিশোধ করে চিকিৎসকের দেখা পেতে সকাল থেকে বসে আছেন।
এমন শতাধিক রোগীকে সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাসপাতালের এই চিত্র প্রতিদিনের। তারা আসেন, অপেক্ষা করেন এবং ফিরে যান।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফয়সাল আহাম্মেদ জানান, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট শরণখোলা উপজেলা হাসপাতালের কনসালটেন্ট, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও শিশুবিশেষজ্ঞসহ ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক রয়েছেন। চিকিৎসকের বাকি আটটি পদ শূন্য।
এ ছাড়া ওয়ার্ড বয় যেখানে তিনজন থাকার কথা সেখানে আছেন দুইজন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পাঁচজনের স্থানে আছে মাত্র একজন; কোনো আয়া নেই।
প্যাথলজিস্টবিহীন হাসপাতালটির এক্স-রে ও ইসিজির মেশিন নষ্ট। অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) যন্ত্রপাতি থাকলেও সেখান থেকে কোনো অপারেশন হয় না। নষ্ট হতে বসেছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।
মহারাজ শেখ বলেন, ‘মুই আর কী কমু বাবা, মোর তো আর ট্যাহা নাই যে ভালো ডাক্তার দেহামু। আইছলোম ডাক্তার দেহাইতে, বইস্যা রইছি ম্যালা সময় ধইরা, কিন্তু ডাক্তারের দ্যাহা পাই নাই।’
চিকিৎসাসেবা নিতে আসা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন বলেন, ‘মোগো হাসপাতালে তো ডাক্তার নাই। এই উপজেলায় বহু সমাজপতি-বড়লোক আছে। হ্যারা মোগো সমস্যা লইয়া কহনও কথা কয় না। কিন্তু মোগো জনপ্রতিনিধিরা যদি এ সমস্যাডা লইয়া কথা বলতে বা উদ্যোগ লইতে, তইলে মোরা স্বাস্থ্যসেবা থাইক্কা বঞ্চিত হইতাম না।’
চিকিৎসক ফয়সাল আহাম্মেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ট্রেনিংয়ে, একজন ডাক্তার ছুটিতে, আরেকজন আইসোলেশনে আছেন। আরেক ডাক্তার তরিকুল ইসলাম বদলি হয়ে গেছেন।’
পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু ও অ্যানেসথেশিয়ান পদে কোনো ডাক্তার না থাকায় প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার সংখ্যা। যে কারণে রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া যাচ্ছে না।
খুব দ্রুত এ সমস্যা কেটে যাবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বাগেরহাট সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার সংকটের বিষয়টি আমার জানা। দেশজুড়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সংকট থাকায় ওই পাঁচ পদে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। তবে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আপদকালীন সংকট উত্তরণের জন্য এরই মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি শিগগিরই সংকট কেটে যাবে।’