বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘পাঁচ বছরের মধ্যে পোশাকশ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমায় আনা সম্ভব’

  •    
  • ১৫ মার্চ, ২০২১ ০০:৩৯

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। এ খাতে প্রায় ৪২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে নারীশ্রমিকই বেশি। এদের ৪৩ শতাংশ বছরে নানা অসুখে ভোগেন। মোট শ্রমিকের ১ শতাংশ আছেন স্বাস্থ্যবিমার আওতায়। শতকরা ৪০ জন শ্রমিক উচ্চমূল্যের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না।’

পোশাকশ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা সহজ করতে ২০২৬ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

রোববার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার আয়োজিত ‘তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমা নীতিমালা ও প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করার সময় তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘পোশাকশিল্পকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। বিশেষত এর বড় অংশজুড়ে রয়েছেন নারীরা। এই বৃহৎ চালিকা শক্তির চিকিৎসাসেবা সহজ করতে ২০২৬ সালের মধ্যেই তাদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে ৫ লাখ, ২০২৩ সালে ১০ লাখ, ২০২৪ সালে ২০ লাখ, ২০২৫ সালে ৩০ লাখ এবং ২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পের সব শ্রমিককে (প্রায় ৪২ লাখ) স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘তৈরি পোশাকশ্রমিকদের একটা উপযুক্ত সুবিধা প্যাকেজের আওতায় আনতে বছরে প্রতিজনের জন্য প্রায় ১ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দরকার হবে। এই প্রিমিয়ামের ৩৬৫ টাকা শ্রমিক, ৩৬৫ টাকা মালিক এবং বাকি ২৭০ টাকা সরকারকে বহন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

‘স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থাপনা ইউনিট’ বা ‘বিমা তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান’ গঠন করে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বিমার আওতায় আনতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। এ খাতে প্রায় ৪২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে নারীশ্রমিকই বেশি। এদের ৪৩ শতাংশ বছরে নানা অসুখে ভোগেন। মোট শ্রমিকের ১ শতাংশ আছেন স্বাস্থ্যবিমার আওতায়। শতকরা ৪০ জন শ্রমিক উচ্চমূল্যের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না।’

গার্মেন্টসকর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা প্রসঙ্গে বিজেএমইএ হেলথ সেন্টারের চেয়ারম্যান হানিফুর রহমান লোটাস বলেন, ‘মালিকদের এই তো এখনও স্বাস্থ্যবিমা করা হয়নি, তাহলে শ্রমিকদের কীভাবে স্বাস্থ্যবিমা হবে? তবে আমরা চেষ্টা করছি। যদিও বিষয়টা অনেক জটিল এবং কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি সব মালিককে ঐক্যবদ্ধ করেই গার্মেন্টসকর্মীদের স্বাস্থ্যবিমার অধীনে নিয়ে আসতে।’

ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল এবং আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের ব্র্যাকের পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিমা সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে। চিকিৎসকরা যখন দেখে এটা স্বাস্থ্যবিমা-বিষয়ক কোনো রোগী তাহলে ওই রোগীকে তারা প্রায়োরিটি দিতে চান না। এ ক্ষেত্রে বিমায় সেবা গ্রহীতাকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’

অনুষ্ঠানে রিসার্চ, ট্রেনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আরটিএম) ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ জগলুল পাশা বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিমা প্রজেক্ট অবশ্যই সরকারি ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিত। না হলে এটি নিয়ে বড় ধরনের ব্যবসা হবে।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা হক বলেন, ‘গার্মেন্টসকর্মীরা সাধারণত কেন যেন কম অসুস্থ হয়। তবে কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকরা অসুস্থ হয় অতিরিক্ত ডিউটির কারণে। নির্দিষ্ট আট ঘণ্টার বাইরেও তাদের অতিরিক্ত কাজের চাপ দেয়া হয়। শ্রমিকরাও চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে ডিউটি করতে বাধ্য হয়। এভাবে সব সময় মানসিক চাপে থাকায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।’

গার্মেন্টসশ্রমিকদের পুরো পরিবারকে বিমার আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন শ্রমিকের ঘরে বাবা-মা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত। এ সময়ে সেই শ্রমিক কি নিজের হেলথ ইনস্যুরেন্স করতে আসবে? সে কি তার বাবা-মা-সন্তানের চিকিৎসা বাদ দিয়ে নিজের জন্য টাকা জমাতে আসবে? সুতরাং মালিকপক্ষকে শুধু শ্রমিক নয় তাদের পুরো পরিবারের স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার মালিকপক্ষকে সহযোগিতা করতে পারে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিমা কার্যকর করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এটিও অসম্ভব নয়, সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিমার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যেখানে শতকরা ১৬ ভাগ লোকের চিকিৎসার প্রয়োজন থাকলেও করাতে পারে না। আর যারা চিকিৎসা করান, তাদের মধ্যে ১৫ ভাগ লোক চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়েন। এ কথাগুলো আমার নয়, বিভিন্ন গবেষণায় বিষয়গুলো উঠে উঠে এসেছে।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের তাহমিনা হকের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারকেও স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা যেতে পারে। তবে এটা মনে রাখতে হবে এই টাকা শুধু সরকার বা মালিকের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। গার্মেন্টসকর্মীদেরকেও একটি প্রিমিয়াম দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (ডিআইআরএ) সদস্য মইনুল ইসলাম, সেন্ট্রাল ফান্ডের ডিরেক্টর জেনারেল মো. আমির হোসাইন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক ড. নুরুল আমিন নাহিদসহ অনেকে।

এ বিভাগের আরো খবর