টিকা নেয়ার পর রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার পর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস প্র্রতিরোধী টিকা প্রয়োগ স্থগিত করে দিয়েছে নরওয়ে, ডেনমার্ক, ইতালি, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশ।
এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ডয়চে ভেলে, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
বিবিসি লিখেছে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-অ-চাকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে শুক্রবার দেশটিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে এমন শঙ্কায় তা এখন বাতিল করা হয়েছে।
এই শঙ্কায় বৃহস্পতিবারই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ স্থগিত করে দিয়েছে ডেনমার্ক, নরওয়ে ও আইসল্যান্ড।
ডেনিশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, টিকাগ্রহীতার অনেকের শরীরে ‘রক্ত জমাটের গুরুতর ঘটনা ঘটায়’ ১৪ দিনের জন্য এ টিকা প্রয়োগ স্থগিত করেছে তারা। এতে রক্ত জমাটের সঙ্গে টিকার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না এ ব্যাপারে কিছু বলেনি দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে ডেনমার্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাগনাস হেউনিকে টুইটারে লিখেছেন, ‘টিকার সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না তা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমরা আগেভাগেই এটি নিয়ে কাজ করছি। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।’
ইউরোপের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এরই মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৩০ জনের মতো ব্যক্তির শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার খবর পাওয়া গেছে।
এই টিকা ‘কোভিশিল্ড’ নামে উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। আর এই টিকার প্রয়োগ চলছে বাংলাদেশেও।
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ পলি রয় ডয়েচেভেলেকে জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস এই রক্ত জমাটের কারণ টিকা নাও হতে পারে। এমন হতে পারে তাদের ‘অন্তর্নিহিত অন্য কোনো সমস্যা আছে’।
ডেনমার্ক থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ স্থগিতের ঘোষণা আসার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে একই সিদ্ধান্তের কথা জানায় আইসল্যান্ড ও নরওয়ে।
গুরুতর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার পর এই টিকা প্রয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ইতালিও। অবশ্য দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সঙ্গে টিকার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না তা এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়।
রক্ত জমাটের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর আসার পর এ বিষয়ে তদন্তে নেমেছে ডেনিশ মেডিসিন এজেন্সি ও ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ)।
বৃহস্পতিবার ইএমএর পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কারণেই রক্ত জমাট বাঁধছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ টিকার উপকারিতা এর ঝুঁকি মোকাবিলা করতে সক্ষম।
একই দাবি অ্যাস্ট্রাজেনেকারও। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, মান নিয়ন্ত্রণে তারা খুবই কঠোর। এই টিকার ক্ষেত্রে গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার বিষয়ে থাইল্যান্ডের টিকাদান কর্মসূচির উপদেষ্টা পিয়াসাকল সাকলসাতায়াদর্ন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার গুণমান ভালো। তবে কয়েকটি দেশ এর টিকাদান কর্মসূচি পিছিয়েছে। তাই আমরাও পেছাচ্ছি।’
থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউরোপে বিতরণ করা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আর থাইল্যান্ডে পাঠানো টিকা এক নয়। কোম্পানিটির টিকা নেয়ার পর রক্ত জমাট বদ্ধজনিত সমস্যা এশিয়ানদের মধ্যে সেভাবে দেখা যায়নি।
২৪ ফেব্রুয়ারি অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০০ ডোজের প্রথম চালান থাইল্যান্ডে পৌঁছায়। একই সময় চীনের উদ্ভাবিত করোনাভ্যাক টিকার ২ লাখ ডোজও দেশটিতে পৌঁছায়।
থাইল্যান্ডে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনের উদ্ভাবিত করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। দেশটির ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ এরই মধ্যে চীনের টিকা নিয়েছেন।
থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া পেছানো হলেও চীনের টিকা দেয়া অব্যাহত থাকবে।