করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণটিকা প্রয়োগ শুরু হলেও প্রতিদিন বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা।
গণটিকা প্রয়োগের ২৮ দিনে মোট টিকা নিয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এ সময়ে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৫২ লাখ মানুষ।
গণটিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ ধরে টিকা নেয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করে টিকা নেয়ার সংখ্যা। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা গত দুই মাসের মধ্য সবচেয়ে বেশি।
১০ জানুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের সংবাদ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ৭১ জন। এই নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৪ জনের।
শনিবার দেশে গণটিকা প্রয়োগের ২৪ দিন টিকা গ্রহীতার সংখ্যা এক লাখে নেমে আসে। এই সংখ্যা এখন একইরকম রয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬৩ জন। সব মিলিয়ে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ৪০ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৯। এদের মধ্যে পুরুষ ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৫০৬ জন এবং নারী ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৪৭ জন।
এদের সঙ্গে যোগ হবে আরও ৫৬৭ জন, যাদের ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেয়া হয়েছিল।
উদ্বোধনের ১০ দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। প্রথম দিন ৩১ হাজার মানুষ টিকা নিলেও তিন দিনের মধ্যে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ছাড়ায়। মাঝে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ২ লাখও ছাড়ায়। এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়। তবে গত সপ্তাহ থেকে এ সংখ্যা কমতে শুরু করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ জন সহ এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৮৬৬ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে মাত্রা খুবই মৃদু। কারও সামান্য জ্বর কিংবা বমি হয়েছে। ঢাকার ৪৭টি এবং ঢাকার বাইরে ৯৫৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম চলেছে।
কোন বিভাগে কত টিকা
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা ভিত্তিক সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকায়। এই জেলায় ২২ হাজার ৯৮৮ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে নড়াইলে, ২৭২ জনকে।
২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২১ হাজার ৬৫ জন। ঢাকা বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৫৯ জন। এ সময়ে রাজধানীতে ২ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৬৯৯ জনকে; এক জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১১ হাজার ৭৫৬ জন। এই বিভাগেও কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
খুলনা বিভাগে ১৬ হাজার ৮৪০ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বরিশালে টিকা দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৫৩১ জনকে। এই বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৫৭৪ জনকে। এদের মধ্যে কারও কারও শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় ৫ হাজার ২৫৮ জনকে। তাদের মধ্যে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১১ হাজার ৪৬ জন; এক জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
বাংলাদেশ করোনার টিকা এনেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। এরই মধ্যে এসেছে ৭০ লাখ টিকা। এর বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে এসেছে ২০ লাখ টিকা।
বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স থেকেও বাংলাদেশ টিকা পাবে। প্রথমে জানানো হয়েছিল, দেশে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসেবে পৌনে ৭ কোটি টিকা পাওয়া যাবে। কিন্তু পরে জানানো হয়, জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ হিসেবে ৮ কোটির মতো টিকা পাওয়া যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে, অন্তঃসত্ত্বা, ৮০ শতাংশের বেশি মৃত্যু ঝুঁকি আছে- এমন রোগী, অ্যালার্জি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হবে না।