দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গণটিকা প্রয়োগের ২৪ দিন শেষে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ১ লাখে নেমে এসেছে। ঢাকা মহানগরে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বেশি হলেও দেশের অন্যান্য এলাকায় কমতে শুরু করেছে। ২৪ দিনে টিকা নিয়েছেন প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ।
শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৯৮৩ জন। সব মিলিয়ে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৫২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪২৩ জন এবং নারী ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৭২৯ জন।
এদের সঙ্গে যোগ হবে আরও ৫৬৭ জন, যাদের ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেয়া হয়।
উদ্বোধনের ১০ দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। প্রথম দিন ৩১ হাজার মানুষ টিকা নিলেও তিন দিনের মধ্যে টিকা প্রয়োগের সংখ্যা ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। মাঝে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষকেও টিকা দেয়া হয়। তবে গত সপ্তাহ থেকে এ সংখ্যা কমতে শুরু করে।
গত কয়েক দিনে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ৪৯ লাখ ২ হাজার ৯৪৮ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনসহ এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৮২৫ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে মাত্রা খুবই মৃদু। কারও সামান্য জ্বর কিংবা বমি হয়েছে।
৭ ফেব্রুয়ারির পর টানা চার দিন বাড়তে থাকে টিকা নেয়া মানুষের সংখ্যা। ঢাকার ৪৭টি এবং ঢাকার বাইরে ৯৫৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম চলেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাভিত্তিক সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকায়। টিকা নিয়েছেন ২৫ হাজার ২১৭ জন। সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে মেহেরপুরে ৮০ জনকে।
২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২৩ হাজার ১৩০ জন। ঢাকা বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন ৩৮ হাজার ২১৯ জন। আর রাজধানীতে ছয়জনসহ ঢাকা বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ১১ জনের।
চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ১০১ জনকে। এই বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১০ হাজার ১১৯ জন। এই বিভাগের কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খুলনা বিভাগে ১৫ হাজার ৬৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এই বিভাগে একজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
বরিশালে টিকা দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ১৬৬ জনকে। এই বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৮ জনকে। এদের মধ্যে তিনজনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় ৩ হাজার ৫০০ জনকে। এই বিভাগেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন; পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি কারও।
বাংলাদেশ করোনার টিকা এনেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। এরই মধ্যে এসেছে ৭০ লাখ টিকা। এর বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেয়া ২০ লাখ টিকাও এসেছে।
বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স থেকেও বাংলাদেশ টিকা পাবে। প্রথমে জানানো হয়েছিল দেশে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসেবে পৌনে ৭ কোটি টিকা পাওয়া যাবে। কিন্তু পরে জানানো হয় জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ হিসেবে ৮ কোটির মতো টিকা পাওয়া যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে, গর্ভবতী, ৮০ শতাংশের বেশি মৃত্যু ঝুঁকি আছে- এমন রোগী, অ্যালার্জি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হবে না।