করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গণটিকা প্রয়োগের ২২ দিন শেষে দেশে টিকা নিয়েছেন প্রায় ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার ১০ জন। সব মিলিয়ে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮১ হাজার ১৬৯ জন।
এদের মধ্যে পুরুষ ২২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯ জন এবং নারী ১২ লাখ ৮৭ হাজার ১০০ জন।
এর সঙ্গে যোগ হবে আরও ৫৬৭ জন, যাদের গণটিকার আগে ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেয়া হয়।
উদ্বোধনের ১০ দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। প্রথম দিন ৩১ হাজার মানুষ টিকা নিলেও তিন দিনের মধ্যে টিকা প্রয়োগের সংখ্যা ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর আর কখনও তা লাখের নিচে নামেনি।
গত কয়েক দিনে টিকা প্রয়োগের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে। এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৩ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জনসহ এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৮০৭ জনের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা খুবই মৃদু। কারও সামান্য জ্বর হয়েছে কিংবা বমি হয়েছে।
৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকা দেয়া শুরু হয়। এরপর টানা চার দিন ধরে বাড়তে থাকে টিকা নেয়া মানুষের সংখ্যা।
ঢাকার ৪৭টি এবং ঢাকার বাইরে ৯৫৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম চলেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাভিত্তিক সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকায়। টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৮০৯ জন। সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে বান্দরবানে ২৫২ জনকে।
২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৮০৯ জন। ঢাকা বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন ৪২ হাজার ৬৪৪ জন। আর রাজধানীতে সাতজনসহ ঢাকা বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ৯ জনের।
চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ২০ হাজার ৪০৪ জনকে। এই বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১১ হাজার ৬৭৫ জন। এই বিভাগের তিনজনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খুলনা বিভাগে ১৯ হাজার ৯১২ জনকে টিকা দেয়া হয়। এই বিভাগে পাঁচজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
বরিশালে টিকা দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৪১৮ জনকে। এই বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৭৬৭ জনকে। এদের মধ্যে একজনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় ৪ হাজার ৫৯৯ জনকে। এই বিভাগেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ৫৯১ জন। এই বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি কারও।
বাংলাদেশ করোনার টিকা এনেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। এরই মধ্যে এসেছে ৭০ লাখ টিকা। এর বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেয়া ২০ লাখ টিকাও এসেছে।
বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স থেকেও বাংলাদেশ টিকা পাবে। প্রথমে জানানো হয়েছিল দেশে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসেবে পৌনে ৭ কোটি টিকা পাওয়া যাবে। কিন্তু পরে জানানো হয় জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ হিসেবে ৮ কোটির মতো টিকা পাওয়া যাবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে, গর্ভবতী, ৮০ শতাংশের বেশি মৃত্যুঝুঁকি আছে এমন রোগী, অ্যালার্জি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকসহ বিভিন্ন রোগীকে টিকা দেয়া হবে না।