দেশে এক সপ্তাহের ব্যবধানে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। গতকাল টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৫২ জন। সোমবার এক দিনের ব্যবধানে কমে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। যা গেল ৯ দিনের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন।
গণটিকা প্রয়োগের ১৩তম দিনে (২২ ফেব্রুয়ারি) টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ২৮০ জন। তবে সেটি সোমবার কমে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারের উদ্যোগে বিনা মূল্যে সারা দেশে টিকা দেয়া শুরু হয়। এরপর টানা চার দিন ধরে বাড়তে থাকে টিকা নেয়া মানুষের সংখ্যা। তবে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা নেয়া কমে আসছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুল রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা যে নিরাপদ, এ বিষয়টি আমরা জনগণকে বোঝাতে পারিনি। আমরা যদি তাদের বোঝাতে পারতাম করোনা প্রতিরোধে টিকা নিতে হবে, এই টিকা নিলে আমরা আমাদের পরিবারকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব, তাহলে টিকা নেওয়া বাড়ত।
টিকা নিতে নিবন্ধন করতে হয়। অনেকেই নিবন্ধন করতে পারেন না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যদি তাদের নিবন্ধনে সহযোগিতা করে, তাহলে অবশ্যই টিকা নিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানুষের ভিড় বাড়বে।’
গণটিকা প্রয়োগের ১৪তম দিন টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ জন। ১৫তম দিন টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৮৫ জন। ১৬ দিনে সারা দেশে টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৯ জন। শুক্রবার ছুটির দিনে টিকা কর্মসূচি বন্ধ ছিল। গত শনিবার ১৭ দিনে টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৯ জন। রোববার টিকা নেয়ার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৫২।
সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গণটিকা প্রয়োগের ১৯ দিনে সারা দেশে টিকা নিয়েছেন ৩২ লাখের বেশি মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ জন।
সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তার মধ্যে পুরুষ ২০ লাখ ৮১ হাজার ৮১৬ জন এবং নারী ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৯ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ২১ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৪৫ জনের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে এসব মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কারও সামান্য জ্বর হয়েছে কিংবা বমি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার ঢাকার ৪৭টি এবং ঢাকার বাইরে ৯৫৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে টিকা দেয়ার কার্যক্রম। ১৯ দিনে জেলাভিত্তিক সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকায়। সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে বান্দরবানে।
২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ২০৫ জন। ঢাকা বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন ৪৩ হাজার ১৪৯ জন। আর রাজধানীতে ১০ জনসহ ঢাকা বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ১২ জনের শরীরে।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ২২ হাজার ৭৯৬ জনকে। এই বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১১ হাজার ৪৭১ জন। এই বিভাগের চারজনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খুলনা বিভাগে ১৬ হাজার ৩৫০ জনকে টিকা দেয়া হয়। এই বিভাগে কারও শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
বরিশাল বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৪৫৯ জনকে। এই বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৫ জনকে। এদের মধ্যে একজনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় ৩ হাজার ৯০৪ জনকে। এই বিভাগে একজনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৯ হাজার ১৯৫ জন। এই বিভাগে একজনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।