বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অনুমোদন পেলেও শুরু হলো না অ্যান্টিবডি টেস্ট

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২১ ০৯:২২

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো হাসপাতালে এ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠিই পায়নি।

করোনাভাইরাস উপসর্গহীনভাবে অনেকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। উপসর্গহীন আক্রান্তদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ে গত ২৪ জানুয়ারি অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দেয় সরকার।

কিন্তু অনুমোদনের এক মাসের বেশি সময় পার হলেও কোনো হাসপাতালে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা সম্ভব হয়নি। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এখনও কিছু জানে না। তারা কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পায়নি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে গণটিকাদান কর্মসূচি চলছে। অনেকের শরীরে উপসর্গহীন করোনা রয়েছে। তাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না, তা দেখতে অ্যান্টিবডি টেস্ট জরুরি। এমনকি যারা টিকা নিয়েছে, তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা যাচাইয়েও এই টেস্ট করার প্রয়োজন রয়েছে।

দেশে অধিকাংশ হাসপাতালে অ্যান্টিবডি টেস্টের সক্ষমতা থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদাসীনতায় পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুল রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক হাসপাতালের সক্ষমতা থাকলেও অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি মিলছে না। আমাদের হাসপাতালে এই সক্ষমতা রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখনও অনুমতি দেয়নি। অনুমোদন দিলেও অনেক শর্ত দেবে। সেই শর্ত পূরণ করা অধিকাংশ হাসপাতালের জন্য কষ্টকর।’

অধ্যাপক মো. সায়েদুল বলেন, ‘আরটিপিসিআর টেস্টের ক্ষেত্রেও অধিদপ্তর এমন আচরণ করেছে। ২ হাজার আরটিপিসিআর টেস্ট সম্পন্ন করতে আইসিডিডিআরবি তিন মাস সময় নিয়েছে। তিন মাস পরে আরটিপিসিআর টেস্ট শুরুর দিনেই আমাদের হাসপাতাল ২ হাজার টেস্ট করিয়েছে।’

দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর থেকেই বিশেষজ্ঞরা এ ভাইরাসে আক্রান্তের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না, তা জানতে অ্যান্টিবডি টেস্টের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

১০ মাস পর ২৪ জানুয়ারি এ ধরনের পরীক্ষার অনুমোদনের বিষয়টি জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় তিনি বলেন, ‘দেশে অনেকের দাবি ছিল অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দেয়ার। এখন এটা চালু করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। আজ আপনাদের যখন বললাম, তখন থেকেই এটা চালু হয়ে গেল।’

তবে মন্ত্রীর এ ঘোষণার পর এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এখনও কিছু জানে না। অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও মুখপাত্র আইয়ুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রী মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। তবে অফিশিয়াল কোনো চিঠি আমরা পাইনি। প্রজ্ঞাপন পেলে এ বিষয়ে কথা বলতে পারব।’

গণহারে হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু না হলেও গবেষণার কাজে কিছু জায়গায় অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গবেষণার কাজে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে। তবে গণহারে এই টেস্ট করার অনুমতি দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো আদেশ আসেনি। এটা নিয়ে কাজ চলছে। খুব দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এক সপ্তাহের মধ্যে অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, এই টেস্ট করার সক্ষমতা রয়েছে এমন কিছু হাসপাতালের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই টেস্টের কেমন মূল্য হবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সেটিরও কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করা হবে।

অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে সরাসরি করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যায় না। তবে যারা উপসর্গহীন আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের রোগ পরবর্তী সময় অ্যান্টিবডি যাচাইয়ের ভিত্তিতে শনাক্ত করা সম্ভব। শরীরে নির্দিষ্ট কোনো রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, সেটি জানতে এ ক্ষেত্রে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আরটি-পিসিআর টেস্টের ওপরই নির্ভর করছিল সরকার। তবে পরীক্ষার হার বাড়াতে ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্ত হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট।

দেশে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি গত ৩ জুন এক সভায় র‌্যাপিড টেস্টের সুপারিশ করে। কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান অবস্থা জানতে অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করা দরকার। এর মাধ্যমে সংক্রমণের পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে। সংক্রমণ বুঝতে হলে অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করা জরুরি।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাস উপসর্গহীনভাবে অনেকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। উপসর্গহীন আক্রান্তদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা এই টেস্ট ছাড়া বলা যায় না। এ জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট খুব জরুরি।

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের কিছুদিনের মধ্যেই অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কিট উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছিল গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে পরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই দুটি কিটের প্রত্যাশিত কার্যকারতা না পাওয়ার কথা জানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গণস্বাস্থ্যের র‌্যাপিড টেস্টিং কিট তৈরির বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, ‘মানোত্তীর্ণ’ না হওয়ার কারণে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে অনেক বিতর্কও হয়।

এ বিভাগের আরো খবর