প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, অবশ্যই করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেবেন তিনি। তবে তা দেশবাসীকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে তালিকাভুক্ত হওয়া উপলক্ষে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
‘আগে কত পারসেন্টকে দিতে পারলাম, সেটা আগে দেখতে চাই। অবশ্যই টিকা নেব। আমাদের একটা টার্গেট ঠিক করা আছে, সেটা পূরণ হওয়ার পরে যদি টিকা থাকে, তাহলে দেব।’
গত ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনার টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান জানান, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ২৮ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছে।
গত বুধবার টিকা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। সংবাদ সম্মেলনে তিনিও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পাশে।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ কোভিশিল্ড টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। দুই চালান আর ভারত সরকারের দেয়া ২০ লাখ ডোজ উপহার মিলে এখন পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে ৯০ লাখের বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পাশে ছোট বোন শেখ রেহানা। ছবি: পিআইডি
করোনা টিকাদান হারে অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সরকারের আরও টিকা কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
‘আরও তিন কোটি ডোজ কেনার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি, যেন একটি মানুষও বাদ না যায়। কোনো দেশ উৎপাদন করতে না পারলে, আমাদের এখানে উৎপাদন করা যায় কি না, সে জন্য দেশের ফার্মাসিউটিক্যালসগুলোকে বলা হয়েছে প্রস্তুত থাকতে।
‘মানুষকে সেবা দেয়া আমার কর্তব্য। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় জাতির পিতার কন্যা হিসেবে এটা কর্তব্য।’
‘করোনা মোকাবিলায় ম্যাজিক নেই’
বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় অনেকটাই সফল। দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৪০০ জনের। আর আক্রান্ত পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৮৩১ জন।
দেশে এক মাসের বেশি সময় ধরে করোনার শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী, কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহ পাঁচ শতাংশের নিচে হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে বলা যায়। অবশ্য নীতিমালায় এও বলা আছে যে, দিনে পরীক্ষা হতে হবে ২০ হাজারের বেশি। কিন্তু দেশে এত বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না।
এই কম নমুনা পরীক্ষার পেছনে অবশ্য সরকারের কোনো দায় নেই। শুরুর দিকে কিটসহ অবকাঠামোগত সমস্যায় পরীক্ষা করতে বাধা পেলেও এখন আর সে পরিস্থিতি নেই। দেশের ২০৬টি ল্যাবে এখন পরীক্ষা করা যায়, সেই সঙ্গে শুরুর হয়েছে অ্যান্টিজেন টেস্টও। জনগণই পরীক্ষা করতে কম যাচ্ছে।
দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ছবি: নিউজবাংলা
করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
‘এটা কোনো ম্যাজিকের কিছু না। যখন যেভাবে বলেছি, সবাই মেনে চলেছে। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করায় এটা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত ম্যাজিক।
‘করোনা সারাবিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছিল। জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে, আমরা যখন যেভাবে বলেছি, সবাই মেনে চলেছে। আমরা সময়োচিত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে। মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেটা দেখেছি। আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছি। সব শ্রেণির মানুষ সহায়তা পেয়েছে। তখনও গবেষণা চলছে, আগাম অর্থ দিয়ে করোনার টিকা কেনার ব্যবস্থা নিয়েছি।’
নিজের কর্তব্য থেকেই এসব কাজ করেছেন বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সরকারের সব সদস্য, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমার দলের নেতাকর্মী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের সদস্য প্রত্যেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। যাকে যখন যে কাজ করতে বলেছি, করেছে। সহযোগিতা-ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে।
‘আমার কোনো ম্যাজিক নয়, এটা বাংলাদেশের মানুষের ম্যাজিক। আমার বাবা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নিজের জীবন দিয়ে গেছেন। কাজেই এটা আমার দায়িত্ব। আন্তরিকতা, দায়িত্ববোধটাই আসল।’