বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৫ বছরেও চালু হয়নি হাসপাতাল, নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি

  •    
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৩:০৪

সম্প্রতি নন্দীগ্রাম হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ফটক আর নিচতলার কয়েকটি কক্ষ খোলা। নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী বা নৈশপ্রহরী। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার বিছানা ও আসবাবের কোনো খোঁজ নেই। বৈদ্যুতিক বাতিগুলোও চুরি হয়েছে।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ শয্যার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ২০০২ সালে। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে তড়িঘড়ি করে নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধন করা হয় ২০০৬ সালে। নির্মাণকাজ শেষে যন্ত্রপাতি সরবরাহের পরও ১৫ বছরে চালু হয়নি এই হাসপাতাল।

শুধু এই হাসপাতাল নয়, প্রায় একই সময়ে নির্মিত জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ২০ শয্যার আলীয়ারহাট হাসপাতালেরও একই অবস্থা। দুটি হাসপাতালের একটিও চালু করতে পারেনি প্রশাসন। কারণ হিসেবে জনবল সংকটকে দায়ী করছে তারা।

একই সময়ে আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারে আরেকটি ২০ শয্যার হাসপাতালের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৮ টাকা। কাজ পায় ঢাকার কোম্পানি কিট-ওয়ে প্যাক। তবে কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি লাপাত্তা হয়ে যায়।

জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানাচ্ছে, নন্দীগ্রাম হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৮ টাকা। আলীয়ারহাট হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয় হয় ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

এই দুটি হাসপাতালের একটিতেও নেই চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। নেই কোনো ওষুধও।

দীর্ঘ সময়েও চালু না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালগুলোর লাখ লাখ টাকার যন্ত্র। তবে ‘জনবল নেই’ জানিয়ে তা নীরব দর্শকের মতো দেখছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, নন্দীগ্রাম হাসপাতালের জন্য ২০০৮ সালে ১৮টি পদ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে এক জন চিকিৎসা কর্মকর্তা, ছয় জন চিকিৎসক, পাঁচ জন সেবিকা, এক জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, এক জন ফার্মাসিস্ট ও এক জন ল্যাব সহকারী রয়েছেন।

চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ শিবগঞ্জের আলীয়ারহাট হাসপাতালের জন্য পদায়ন করা হয় ১১ জনকে। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পিয়ন, আয়া, ওষুধ বরাদ্দ না থাকাসহ নানা সংকটে তাদের সেখানে রাখা সম্ভব হয়নি। পরে পদায়ন পাওয়া চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত করা হয়।

সম্প্রতি নন্দীগ্রাম হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ফটক আর নিচতলার কয়েকটি কক্ষ খোলা। নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী বা নৈশপ্রহরী। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার বিছানা ও আসবাবের কোনো খোঁজ নেই। বৈদ্যুতিক বাতিগুলোও চুরি হয়ে গেছে।

দরজা-জানালার কপাট ঘুনপোকা খেয়েছে। ফলে সেগুলো খুলে পড়ছে। মেঝেতে ধুলার আস্তরণ। আর অপারেশন থিয়েটারে পড়ে আছে ভাঙা যন্ত্রপাতি।

হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা ভবনগুলো পরিণত হয়েছে জঙ্গলে। এলাকাবাসী জানান, এই স্থানগুলো এখন মাদকসেবীদের আখড়া।

নন্দীগ্রামের হাসপাতালের নিচতলায় দুটি কক্ষ এখন ব্যবহার করছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র। উপজেলায় তাদের অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখানে সপ্তাহে এক দিন নারীদের জন্মবিরতিকরণ অপারেশন করা হয়।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মুশফিকুর রহমান জানান, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেহাল হওয়ায় এখানে নারীদের জন্মবিরতিকরণ অপারেশন করা হয়। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে মাসে ৭০ থেকে ৮০টি অপারেশন হয়।

এলাকাবাসী জানান, নন্দীগ্রামের ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে বিজরুল বাজারে। এ কারণে উপজেলা সদরে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়।

নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা দুই জন উপজেলার চিকিৎসক। আমাদের অফিসে সংস্কারকাজ চলছে। এ কারণে আমরা এখানে অফিস করছি।

‘অথচ লোকবলের অভাবে হাসপাতালেই নষ্ট হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি, এসিসহ আরও অনেক কিছু।’

নন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, জনগণের সেবার জন্য অত্যাধুনিক এই হাসপাতাল চালু হওয়া খুব জরুরি।

সাবেক মেয়র সুশান্ত কুমার বলেন, ‘এই হাসপাতাল চালু হলে কাহালু ও নন্দীগ্রাম মিলে প্রায় ২ লাখ লোক উপকৃত হবে। এই সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও চালু করেছে। জনগণ সেবা পাচ্ছে। অথচ অজ্ঞাত কারণে এই হাসপাতাল চালু হচ্ছে না।’

আলীয়ারহাট হাসপাতালের অবস্থান উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এখানে একজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা ও একজন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। প্রেষণে তাদের এখানে রাখা হয়েছে। লোকজনকে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

সান্তাহার পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকায় বসবাস প্রায় লক্ষাধিক মানুষের। অথচ তাদের জন্য শহরে কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র বা হাসপাতাল নেই। চিকিৎসার জন্য এ এলাকার মানুষদের পাঁচ কিলোমিটার দূরে নওগাঁ সদর হাসপাতাল অথবা প্রায় আট কিলোমিটার দূরে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়।

তাদের চিকিৎসায় সবচেয়ে উপযোগী হতো সান্তাহার হাসপাতাল। কিন্তু ১৫ বছরেও এ হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান তুহীন বলেন, ‘২০ শয্যার দুটি হাসপাতালের একই অবস্থা। জনবল নেই। হাসপাতালেই নষ্ট হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি।

‘সরকার শুধু ভবন আর যন্ত্রপাতি দিয়েছে, কোনো লোকবল দেয়নি। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘লোকবলের জন্য আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। কাজ হয়নি। ফলে ১৫ বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট না হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর