করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়ে শুরুতে বিএনপির নেতারা বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বললেও অবস্থান বদলাচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে দলটির অনেক নেতা টিকা নিয়েছেন। রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেয়ার অপেক্ষায় অনেকে।
এবার টিকা নিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক। সেই সঙ্গে সবাইকে টিকা নিতে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় টিকা নেন ফারুক। এ সময় তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমাও টিকা গ্রহণ করেন।
টিকা নিয়ে ফারুক বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত যেকোনো টিকাই সবার গ্রহণ করা উচিত।’
- আরও পড়ুন: ‘বিএনপিকে ভ্যাকসিন দিয়ে মারতে চায় সরকার’
অথচ শুরু থেকেই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা টিকার বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। কোনো প্রমাণাদি না দিয়েই দলটির নেতারা বলেছেন, বেশি দামে ভারত থেকে টিকা কিনেছে সরকার।
দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমনও বলেছেন, এই টিকা দিয়ে বিএনপিকে নিধন করতে চায় সরকার। যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ভারতে উৎপাদিত টিকাটি প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘বিএনপি টিকা নেবে না বলেনি’
কিন্তু এসব সমালোচনায় পাত্তা না দিয়ে দেশে গণটিকা প্রয়োগের পরের দিনই ৮ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। তবে দলের আরও কেউ টিকা নিয়েছেন কি না এ ব্যাপারে তখন কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকা নিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। ছবি: নিউজবাংলা
পরের দিন ভারত থেকে আনা করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাই বিএনপি নেবে বলে ইঙ্গিত দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, টিকা নেবে না এমন কথা তারা কখনও বলেনি।
বিএনপি কি করোনার টিকা নেবে? জবাবে দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছিলেন, ‘আমরা টিকা নেব না এটা কখনও বলিনি। টিকা নিয়ে দুর্নীতির কথা বলেছি। যার যখন সময় হবে তখন টিকা নেবে। আর এটা তো কেউ দান করতেছে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণকে সার্ভিস দেয়া। এটা একটা প্রসেসিং।’
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিকার প্রয়োগ চলছে। এসব টিকার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না, রাশিয়ার স্পুতনিক ও চীনের সিনোভ্যাক। তবে বাংলাদেশে প্রয়োগ চলছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকা।
কোভিশিল্ডের ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে সরকার। এর মধ্যে হাতে এসেছে ৫০ লাখ ডোজ। এ ছাড়া, এই টিকার ২০ লাখ ডোজ উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
মোট ৭০ লাখ ডোজ হাতে নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এই টিকার গণপ্রয়োগ শুরু হয়েছে। টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে ক্রমাগত। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে টিকা দেয়া হয়ে গেছে সাড়ে ১৮ লাখের বেশি। শতকরা হিসাবে তা মোট জনসংখ্যার ১.১৫ শতাংশের মতো।
টিকা দেয়ার হারে ভারত থেকেও এগিয়ে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে টিকা দেয়া হয়েছে ১ কোটি দুই লাখের কিছু কম মানুষকে। শতকরা হিসাবে তা ০.৭৫ শতাংশের মতো।
সবাইকে টিকা দিতে আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’
তার দাবি, করোনা নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে বিএনপি যেসব পরামর্শ দিয়েছিল তা মানা হলে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরও কমানো যেত।
ফারুক বলেন, ‘ইতিপূর্বে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ও মহাসচিবের মাধ্যমে কোভিড সম্পর্কে সরকারকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগালে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার অনেক কম হতো।
‘তবুও সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই করোনার সময়ে জনগণের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে এবং সরকারকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’