তৃতীয় দিনে দেশে টিকা গ্রহিতার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। রোববার প্রথম দিন ৩১ হাজার মানুষ টিকা নিলেও দ্বিতীয় দিন টিকা নিয়েছিল প্রায় দেড় গুণ ৪৬ হাজারের বেশি লোক। তবে মঙ্গলবার এক লাখ টিকা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে।
প্রথম দিন ২১ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দ্বিতীয় দিন দেখা গিয়েছে ৭১ জনের মধ্যে। আর তৃতীয় দিন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ৯৪ জনের। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০৭ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তিন দিনে মোট টিকা নিলো ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫১ জন। এই সংখ্যার সাথে যোগ হবে আরও ৫৬৭ জন, যাদেরকে গত ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি টিকা দেয়া হয়েছিল।
শতকরা হিসাবে মঙ্গলবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ০.০৯২ শতাংশ, যা যে কোনো টিকার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক চিত্র। আর তিন দিন মিলিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ০.১১ শতাংশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক মিজানুর রহমানের কাছে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারও কারও ক্ষেত্রে টিকা দেয়ার স্থান লাল হয়ে গেছে। সামান্য জ্বর এসেছে কারও। একটু ব্যথা করছে-এমন তথ্য এসেছে।
তৃতীয় দিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি টিকা নেন।
ঢাকার ৪৬টি এবং ঢাকার বাইরে ৯৫৫টি টিকাদান কেন্দ্রে চলছে এই কার্যক্রম, যেগুলোর প্রতিটিই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তালিকায় বলা হয়, তৃতীয় দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট ১ লাখ ১০ হাজার ৮২ জন। আগের দিন টিকা নিয়েছিলেন ৪৬ হাজার ৫০৯ জন।
তৃতীয় দিন জেলাওয়ারি সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আর সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে ঝালকাঠিতে।
ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ৫১৭ জন। আর ঝালকাঠিতে নিয়েছেন ২৫৪ জন।
এই টিকা দেশে আসার পর যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা অপপ্রচার চলছিল, তার তেমন কোনো নমুনা দ্বিতীয় দিনেও দেখা যায়নি। ৯৪ জনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগে। টিকা নিয়েছেন ২৫ হাজার ২২০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের মধ্যে টিকা নিয়েছে ১২ হাজার ৫১৭ জন।
এই বিভাগে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৭৯১ জন আর নারী ৭ হাজার ৪২৯ জন।
এদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এদের এক জন রাজধানী ঢাকার।
চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ২৩ হাজার ৫৪৪ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৪৮৩ ও নারী ৬ হাজার ৬১ জন। এদের মধ্যে ৩০ জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। রাঙামাটি জেলায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ১৬ জনের।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১৩ হাজার ১১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৮৪৩ ও নারী ৩ হাজার ২৭১ জন। এদের মধ্যে ১৩ জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
খুলনা বিভাগে ১১ হাজার ৩৭২ জনকে টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৬৮৩ জন পুরুষ, নারী ২ হাজার ৬৭৯ জন। এই বিভাগে ১৬ জনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
বরিশাল বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে চার হাজার ১৮১ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ১৮৩, নারী ৯১৮।
এই বিভাগে এক জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ৮ হাজার ৫৫৯ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ২০৮, নারী দুই হাজার ৩৫১।এদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ৭ জনের শরীরে।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় ৪ হাজার ৮৫৫ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৬১২ ও নারী ১ হাজার ২৪৩ জন। এই বিভাগে ৯ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১০ হাজার ২৩৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৭৮৩ ও নারী ২ হাজার ৪৫৪ জন। এই বিভাগেও ৮ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান উদ্বোধন করার পর ২৬ জন ও পরদিন যে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়, তাদের মধ্যেও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
টিকা নেয়ার পর সুস্থ আছেন বলে জানান রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। ছবি: নিউজবাংলা
গণটিকায় বিপুলসংখ্যক মানুষকে প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি কী হয়, সেদিকে দৃষ্টি ছিল মানুষের।
ভারত থেকে এই টিকা আসার পর থেকেই বিএনপি এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, এই টিকা দিলে মানুষ মারা যাবে। তিনি এমনও বলেন, সরকার টিকা দিয়ে বিএনপিকে মেরে ফেলতে চায়।
শতকরা হিসাবে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, যা যে কোনো টিকার ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক চিত্র।