টিকা আসতে দেরি হয়নি। গণটিকাদানেও বিলম্বের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে টিকাদান শুরু করেছে সরকার। আর শুরুর দিনেই টিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। এ কর্মসূচির সার্বিক দিক, নানা গুজব ও টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
প্রশ্ন: গণটিকাদানের শুরুতেই কেন টিকা নিলেন?
জাহিদ মালেক: টিকা নিয়ে এক ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল। নানা মহল থেকে সমালোচনা আসছিল। অনেকেই বলেছে, এ টিকা নিরাপদ নয়, মান ভালো না। এ কারণে মন্ত্রী হিসেবে মানুষের আস্থা অর্জনে প্রথমে টিকা নেয়া। টিকা নেয়ার পর আমি কোনো ধরনের অসুস্থতা বোধ করছি না। আমি মনে করি, সকলেরই টিকা নেয়া দরকার। এতে আপনিও সুরক্ষিত থাকবেন, আপনার পরিবার এবং দেশও সুরক্ষিত থাকবে।
প্রশ্ন: টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তো অনেকেই ভয়ে ছিলেন, টিকা নেয়ার পর আপনি কী বললেন।
জাহিদ মালেক: আপনি জানেন, আজ আমিসহ অনেক মন্ত্রী টিকা নিয়েছেন। আজ সারা বাংলাদেশে সমস্ত জেলা-উপজেলায় টিকা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। আশা করি, আজ লক্ষাধিক লোক টিকা গ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। একেক জনের কথা শুনেছি। তাদের হাল্কা জ্বর এসেছিল, যা কারও কয়েক ঘণ্টায় বা কারও এক দিনেই সেরে যায়। আশা করি, আজ আমাদের টিকা নেয়ার মাধ্যমে সকলে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ হবেন। মানুষের জন্যই তো টিকা।
আমরা আজ যারা টিকা নিয়েছি, সকলেই খুব ভালো আছি, সুস্থ আছি। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কিছু মানুষ হয়তো নিজেদের স্বার্থে বিরূপ প্রচারণা চালান। কিন্তু আমাদের স্বার্থ হলো দেশবাসীকে রক্ষা করা। আমরা চাই, এ টিকার মাধ্যমে দেশবাসীকে করোনা থেকে রক্ষা করতে। সে জন্য কোনো ধরনের অপপ্রচারে কান না দিয়ে আমাদের আহ্বান: টিকা গ্রহণ করবেন এবং ভালো থাকবেন।
প্রশ্ন: সবাই কি টিকা পাবেন, নাকি টিকা নিয়ে সংকট দেখা দেবে?
জাহিদ মালেক: আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা রয়েছে। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে আমাদের হাতে ৭০ লাখ টিকা রয়েছে। সে টিকা আমরা ৩৫ লাখ লোককে দুই ডোজ করে দিতে পারব। যদি এক ডোজ করে দেই, ৭০ লাখ লোককে দিতে পারব। ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা দ্বিতীয় লটের টিকা পাব। তারপর আবার মার্চ-এপ্রিলে পাব। কাজেই কখনই আমাদের টিকার কমতি বা সংকট হবে না। শহরের ও গ্রামের যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, ডাক্তার, নার্স, মিডিয়াকর্মী, পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য যারা সব সময় বাইরে কাজ করেন, তারা সবার আগে টিকা নেবেন। ৫৫ বয়সের ওপরে যারা আছেন তাদের আহ্বান করব, যে জায়গাতেই থাকুন না কেন আপনারা এসে টিকা নেবেন।
প্রশ্ন: টিকা পেতে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। এ নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর সমাধান কী?
জাহিদ মালেক: টিকা পেতে সবাইকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। যদি কারও কোনো সমস্যা হয়, তাহলে আমাদের উপজেলা-ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে এসে নিবন্ধন করবেন এবং সেখান থেকে এসেই টিকা নেবেন। যদি তথ্যকেন্দ্রেও নিবন্ধন করতে না পারেন, তাহলে টিকাকেন্দ্রে আপনাদের জন্য নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে, সেখানে এসে নিবন্ধন করে টিকা নিয়ে যাবেন।
প্রশ্ন: নিবন্ধন শুরুর ১০ দিন পার হলেও এখনও সুরক্ষা অ্যাপ আসেনি গুগল প্লে স্টোরে, এই ব্যর্থতার দায় কার?
জাহিদ মালেক: অ্যাপ আইসিটি মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে এবং গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটি আপলোড করেছে। এটা একটা প্রসেসিংয়ের বিষয়, তাই একটু সময় লাগছে। এখন আপাতত সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন চলছে। ওয়েবসাইটটি আইসিটি ডিভিশনের তত্ত্বাবধানেই চলছে। তারাই এটার দেখাশোনা করছে। নতুন একটা ওয়েবসাইট তৈরি হলে কিছু সমস্যা হতেই পারে। এক্ষেত্রে যখনই যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, আইসিটি ডিভিশনকে আমরা জানাচ্ছি এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে দিচ্ছে। আমরা সব সময় এ বিষয়ে সজাগ আছি। তাদের সঙ্গে সব সময়ই আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা বলেছি, কোনো কারণে অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যদি নিবন্ধন করতে দেরি হয়, তাহলে আপনারা টিকাকেন্দ্রে এসে হাতে নিবন্ধন করে নেবেন। পরে আমরা ওই কাগজগুলো আমাদের মূল সার্ভারে এন্ট্রি করে দেব। কাজেই অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কোনো সমস্যা নয়, আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছি।
প্রশ্ন: তাহলে সমাধান কী?
জাহিদ মালেক: অ্যাপের বিষয়টা সময়মতো হওয়া দরকার। আগে-পরে কোনো বিষয় নয়। সেটা সময়মতোই হয়েছে, কাজ চলছে। আশা করি এটা নিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি হবে না।