গণটিকার দ্বিতীয় দিনে প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে দেড় গুণ মানুষ নিল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক।
রোববার প্রথম দিন ৩১ হাজার মানুষ টিকা নিলেও দ্বিতীয় দিন নিয়েছে ৪৬ হাজারের বেশি।
প্রথম দিন ২১ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দ্বিতীয় দিন দেখা গিয়েছে ৭১ জনের মধ্যে।
করোনার টিকা আসার পর থেকেই ফেসবুকে টিকাবিরোধী অপপ্রচার চলেছে। পাশাপাশি বিএনপি এ নিয়ে নানা নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে টিকা নিতে নিরুৎসাহিত করছে। তবে টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে রোববার প্রধান বিচারপতি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, বিমানবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধানসহ ভিভিআইপিরা টিকা নেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সোমবার করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেন। ছবি: নিউজবাংলা
দ্বিতীয় দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, খাদ্যমন্ত্রীসহ আরও বিশিষ্টজন টিকা নেন।
ঢাকার ৫০টি এবং ঢাকার বাইরে ৯৫৫টি টিকাদান কেন্দ্রে চলছে এই কার্যক্রম, যেগুলোর প্রতিটিই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তালিকায় বলা হয়, দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। আগের দিন টিকা নিয়েছিলেন ৩১ হাজার ১৬০ জন।
দ্বিতীয় দিন জেলাওয়ারি সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আর সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে ঝালকাঠিতে।
ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন সাত হাজার ১৭৮ জন। আর ঝালকাঠিতে নিয়েছেন ১০০ জন।
এই টিকা দেশে আসার পর যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা অপপ্রচার চলছিল, তার তেমন কোনো নমুনা দ্বিতীয় দিনেও দেখা যায়নি। ৯২ জনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
শতকরা হিসাবে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, যা যে কোনো টিকার ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক চিত্র।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক মিজানুর রহমান এক প্রশ্নে বলেন, টিকা নিলে স্বাভাবিকভাবে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সেগুলো দেখা দিয়েছে। এটা বড় ধরনের কোনো সমস্যা নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে টিকা দেয়ার স্থান লাল হয়ে গেছে। সামান্য জ্বর এসেছে কারও। একটু ব্যথা করছে-এমন তথ্য এসেছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকা দেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণে সবাইকে ৩০ মিনিট হাসপাতালে রাখা হয়। আর তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান উদ্বোধন করার পর ২৬ জন ও পরদিন যে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়, তাদের মধ্যেও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
গণটিকায় বিপুলসংখ্যক মানুষকে প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি কী হয়, সেদিকে দৃষ্টি ছিল মানুষের।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকা নিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। ছবি: নিউজবাংলা
ভারত থেকে এই টিকা আসার পর থেকেই বিএনপি এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, এই টিকা দিলে মানুষ মারা যাবে। তিনি এমনও বলেন, সরকার টিকা দিয়ে বিএনপিকে মেরে ফেলতে চায়।
তার এই বক্তব্যের পর সামাজিকমাধ্যমে বিএনপির সমর্থকরা ব্যাপকভাবে টিকাবিরোধী প্রচার চালিয়েছেন।
তবে আজ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন নিজে করোনা প্রতিরোধে টিকা নিয়েছেন। তিনি দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিয়ে এসে আবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে কাজ করেন। বলেছেন, ইনজেকশন নিতে ছোটবেলা থেকেই তিনি ভয় পান। সামান্য ব্যথা ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োগের জন্য সারা দেশে ৬০ লাখ টিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। আরও ১০ লাখ টিকা হাতে রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় দিনে টিকাদানে আগ্রহীদের নিবন্ধনের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এতদিন কেবল অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী, সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারের অত্যাবশ্যকীয় কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি কেবল ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীরা নিবন্ধন করতে পারতেন।
তবে এখন থেকে বয়স ৪০ হলেই যে কেউ নিবন্ধন করতে পারবেন। আবার অনলাইনের পাশাপাশি নিবন্ধন করা যাবে টিকাদান কেন্দ্রে গিয়েও।
কোথায় কত টিকা
প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিন বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগে। টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ৮২২ জন। যাদের মধ্যে পুরুষ নয় হাজার ৬১৭ আর নারী তিন হাজার ১৫১ জন।
এদের মধ্যে ১৭ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদের ১১ জন রাজধানী ঢাকায় টিকা নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৪৮০ জনকে। এর আট হাজার ৭৫ জন পুরুষ, নারী দুই হাজার ৪০৫ জন।
এদের মধ্যে আট জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৪২ জন। এর চার হাজার ৪৫২ জন পুরুষ, নারী এক হাজার ৮০ জন।
এদের মধ্যে ২২ জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
খুলনা বিভাগে চার হাজার ১৭০ জনকে টিকা দেয়া হয়। এর তিন হাজার ১২৮ জন পুরুষ, নারী এক হাজার ৪২ জন।
এই বিভাগে ১৪ জনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
বরিশাল বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে এক হাজার ৫৪৪ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ২৭১, নারী ২৭১ জন।
এই বিভাগে কারও মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৯৪৫ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৮৮৫ জন, নারী এক হাজার ৬৯ জন।
এদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তিন জনের শরীরে।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় দুই হাজার ৩৯৪ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৯৪৩ জন, নারী ৪৫১ জন।
এই বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ৭ জনের শরীরে।
রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ৫০৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৩০৮ ও নারী এক হাজার ১৯৫ জন।
এই বিভাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ১৯ জনের শরীরে।