বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বণ্টনের জোট কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশকে করোনা প্রতিরোধী ফাইজারের টিকা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা।আরও পড়ুন: ফাইজার টিকা পেতে আগ্রহী বাংলাদেশ
মার্চে কোভ্যাক্সের টিকা দেশে পৌঁছানো শুরু হবে বলে বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম।
সংরক্ষণ সুবিধার দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য অক্সফোর্ডের টিকাই ভালো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক কোটি ২৭ লাখ ডোজ টিকার মধ্যে দেশে প্রথম পর্যায়ে ৫০ লাখ ডোজ পাবে বাংলাদেশ।
‘কোভ্যাক্স এক চিঠিতে জানিয়েছে বাংলাদেশকে তারা অক্সফোর্ডের টিকা দেবে। ফাইজারের টিকা পেলে তা সংরক্ষণের জন্য আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হতো। এখন অক্সফোর্ডের টিকা দিলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী বেশ কিছু টিকার প্রয়োগ চলছে। এসবের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না, রাশিয়ার স্পুতনিক, চীনের সিনোভ্যাক্স এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, যা কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
এসব টিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির যৌথ প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত ফাইজারের টিকাই, প্রায় ৯৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ইসরায়েল ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই এই টিকার প্রয়োগ চলছে।
কিন্তু এই টিকা সংরক্ষণপ্রক্রিয়া অনেক চ্যালেঞ্জিং। মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেফ্রিজারেটরে রাখতে হয় এই টিকা। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এই ব্র্যান্ডের কিছু টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশেরও।
বাংলাদেশ ফাইজারের নেবে কি না, তা জানতে চেয়ে গত মাসে চিঠি দিয়েছিল কোভ্যাক্স। তাদের চিঠিতে বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা নিতে চাইলে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়েছিল। জবাবে বাংলাদেশ সরকার ওই টিকা নেয়ার আগ্রহও প্রকাশ করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তখন জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবিতে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় টিকা রাখা যায়, এমন রেফ্রিজারেটর আছে।
কিন্তু কোভ্যাক্স ফাইজারের বদলে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকাই বাংলাদেশকে দিচ্ছে। কোভ্যাক্স ছাড়াই অবশ্য এরই মধ্যে এই টিকার ব্যবস্থা করেছে সরকার।
সিরাম থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আনছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান দেশে পৌঁছেছে। ধাপে ধাপে আসবে বাকি ডোজগুলোও। এ ছাড়া এই টিকার ২০ লাখ ডোজ উপহার দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
দেশে প্রাথমিকভাবে ৫৭৭ জনকে দেয়া হয়েছে করোনা প্রতিরোধী টিকা। ছবি: নিউজবাংলা
কোভিশিল্ড টিকার প্রয়োগও শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫৭৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। সারা দেশে টিকা প্রয়োগ শুরু হবে আগামী রোববার।
দেশে এখন পর্যন্ত মজুত আছে কোভিশিল্ড টিকার প্রায় ৭০ লাখ ডোজ। এর মধ্যে সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউরোপের দেশ হাঙ্গোরিকে পাঁচ হাজার ডোজ টিকা দিচ্ছে বাংলাদেশ।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম জানালেন, বুধবার বিভিন্ন দেশে টিকা বণ্টনের যে তালিকা কোভ্যাক্স প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, জুনের মধ্যে বাংলাদেশ এক কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ডোজ করোনা টিকা পেতে যাচ্ছে। তালিকায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের তথা কভিশিল্ড টিকাই পাচ্ছে।
টিকার যে শর্ত, তাতে ১৮ বছরের নিচে, গর্ভবতী ও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে এসব মিলিয়ে দেশের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে না।
আগামী জুনের মধ্যে ৯ কোটি ডোজ টিকা আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে চুক্তি হয়েছে। এই টিকার জন্য এর মধ্যে সিরাম ইনস্টিউটটকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
কেনা টিকা ও কোভ্যাক্স ছাড়াও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস-গ্যাভি বাংলাদেশকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।