বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টেস্টের মূল্য তালিকা: আদেশ মানছে না হাসপাতাল

  •    
  • ২৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০৮:২৮

১০ ধরনের টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, এ মূল্য তালিকা অধিকাংশ হাসপাতালে টানানো হয়নি।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি ফি নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব পরীক্ষার মূল্য ঠিক করে একটি তালিকা প্রত্যেক হাসপাতালে টানানোর ব্যাপারে আদালত ও সরকারের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে বেশির ভাগেই এ তালিকা দেখা যায়নি।

পরীক্ষার ফি বেশি নেয়া নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করে একটি চিঠি দেয়। সেখানে করোনাসহ ১০টি পরীক্ষার ফি নির্ধারণের জন্য তাগিদ দেয়া হয়। এ বিষয়ে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মূল্য নির্ধারণ করে হাসপাতালে টানানোর নির্দেশ দেয়।

সে অনুযায়ী, গত ২১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এতে বলা হয়, এসব পরীক্ষার মূল্য তালিকা হাসপাতালের দৃশ্যমান স্থানে টানাতে হবে। গত ২৮ ডিসেম্বর অক্সিজেন ও করোনা সংক্রান্ত ১০টি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

১৩ জানুয়ারি এ মূল্য তালিকা কার্যকর করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে পাঠানো হয়। ২১ জানুয়ারি জরুরি বিজ্ঞপ্তি আকারে মূল্য তালিকাটি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রাজধানীর ছয়টি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে মাত্র একটিতে তালিকা টানানো পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মূল্য তালিকা বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।

ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে রোববার দুপুর পর্যন্ত মূল্য তালিকা টানানো দেখা যায়নি। এ বিষয়ে হাসপাতালটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুল ইসলামের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বক্তব্যের জন্য হাসপাতালের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করতে বলেন।

ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে রোববার দুপুর পর্যন্ত মূল্য তালিকা টানানো দেখা যায়নি। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের-ই-খুদা (দ্বীপ) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনা স্বাক্ষর হয়েছে ২১ জানুয়ারি। মাঝখানে দুই দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় ওই তালিকা টানানো হয়নি। রোববার সকালবেলা আমরা ওই নির্দেশনা হাতে পেয়েছি।

‘এটা নিয়ে কাজ চলছে। আমরা আমাদের যে ব্যানার ডিজাইন আছে, সে অনুসারে যত দ্রুত সম্ভব তালিকা টানানোর ব্যবস্থা করব।’

এর আগে ল্যাবএইড হাসপাতালে এই প্রতিবেদক রোগীদের কাছ থেকে সঠিক মূল্য নেয়া হচ্ছে কি না তা যাচাই করতে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশিত ১০টি টেস্টের ক্ষেত্রে বেঁধে দেয়া মূল্যই নিতে দেখা গেছে।

দুপুরে টেস্ট করতে আসা সামিরা নামে একজনের কাছে জানতে চাওয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মূল্য তালিকা অনুসারে ওই হাসপাতালে মূল্য নেয়া হয়েছে কি না। তিনি বলেন, সেই মূল্যই রাখা হয়েছে। দুলাল নামের একজন রোগীও টেস্ট করতে একই মূল্য দিয়েছেন বলে জানান।

গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে রোববার দুপুর পর্যন্ত তালিকা টানানো দেখা যায়নি। তবে নিউজবাংলার প্রতিবেদক হাসপাতালটির মানবসম্পদ বিভাগে পৌঁছার পর মূল্য তালিকা টানানো নিয়ে তোড়জোর দেখা যায়। দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা টানানোর বিষয়ে হাইকোর্ট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশের কথা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির উপপরিচালক ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম।

মিরপুর-১ থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে বাবার কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান করতে এসেছেন শাহীন আহমেদ। তিনি জানান, সিটি স্ক্যানের জন্য হাসপাতালে পরিশোধ করতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা।

সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকায় সিটি স্ক্যানের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য স্থির করা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের থেকে কম নেয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শাহীন আহমেদ।

তবে দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন আব্দুর রাজ্জাক। চার বছর বয়সী ছেলের সিটি স্ক্যান করতে আসা এ ব্যক্তি বলেন, ‘আমি জানি না, কোন পরীক্ষার ফি কত। সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা থাকলে আমি জানতে পারতাম, আমার কাছ থেকে কম না বেশি নিচ্ছে।’

হাসপাতালের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে প্রতিবেদকের কাছে থাকা মূল্য তালিকা নিয়ে ফটোকপি করে রাখেন তিনি। এরপর হাসপাতালের নিচ তলায় নোটিশ বোর্ড ও দ্বিতীয় তলায় কাউন্টারের সামনে দুটি মূল্য তালিকা টানানো হয়।

নিউজবাংলা জানতে চাওয়ার পর মূল্য তালিকা টানানোর ব্যবস্থা করে সেন্ট্রাল হাসপাতাল। ছবি: নিউজবাংলা

সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী ফি চালুর সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানান হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বোর্ড সভায় আজকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর তা কার্যকর হবে।’

মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালেও সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা দৃশ্যমান স্থানে টানানো দেখা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বিভিন্ন টেস্ট করাচ্ছেন। তবে নিচে নির্মাণকাজ চলায় মূল্য তালিকা টানাতে পারেননি।

নির্মাণকাজ চলায় মূল্যতালিকা টানাতে পারেনি বলে জানিয়েছে আদ-দ্বীন হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

খিলগাঁও থেকে আদ দ্বীন হাসপাতালে এস ক্রিয়েটিনিন ও এস ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করাতে এসেছেন মঞ্জুরুল আহমেদ। তিনি জানান, এস ক্রিয়েটিনিনের জন্য ফি নেয়া হয়েছে ১৬০ টাকা। এস ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে ৭০০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্য থেকে কম।

আদ দ্বীন হাসপাতালের এজিএম আবু সাইদ মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মেনে ফি নিচ্ছি। তবে আমাদের কনস্ট্রাকশন চালু থাকায় তালিকা টানানো হয়নি। আমরা দ্রুতই টানানোর ব্যবস্থা করছি।’

ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী দৃশ্যমান স্থানে অক্সিজেনের ব্যবহার মূল্য ও ১০টি টেস্টের তালিকা দেখতে পাওয়া যায়নি। ওই তালিকার বিষয়ে অবগত রয়েছেন কি না জানতে চাইলে সেখানকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি।

মূল্য তালিকা পাওয়া যায়নি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা টানানোর নির্দেশনা পায়নি। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে আনোয়ার খান গ্রুপের রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম সচিব সৈয়দ নাজমুল হক সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি। আমি এ বিষয়ে এখনও জানি না। আমি আপনাকে পরে জেনে জানাচ্ছি।’

রোববার বিকেলে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আমাদের হাতে আসেনি। আমরা পাইনি। এ কারণে আমাদের হাসপাতালে টাঙানোও হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ডিসিশন হওয়ার পর একটি প্রক্রিয়া তো থাকেই।’

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন মূল্য তালিকা না পাওয়া গেলেও পুরনো একটি তালিকা টানানো পাওয়া গেছে। এতে তিনটি পরীক্ষার নির্ধারিত চার্জ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত তালিকায় ১০টি পরীক্ষার মূল্য বলা আছে।

তালিকায় তিনটি পরীক্ষার মূল্য পাওয়া গেছে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ থেকে জানানো হয়, তারা বেশি নিচ্ছেন না। কিন্তু তালিকার বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

প্যাথলজি বিভাগের অফিস সহকারী আলী আজগর বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। স্যারেরা বলতে পারবেন।’

হাসপাতালের পরিচালক ও উপপরিচালক কাউকে তখন উপস্থিত পাওয়া যায়নি।

রাজধানীতে একমাত্র স্কয়ার হাসপাতালে মূল্য তালিকা টানানো অবস্থায় পাওয়া যায় এবং নির্ধারিত মূল্যেই পরীক্ষা করাতে দেখা গেছে।

হাসপাতালের বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা রেজা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘হ্যাঁ, মূল্য তালিকা আমরা টানিয়েছি। আপনি চাইলে দেখতে পারেন।’

তালিকা টানানো পাওয়া গেছে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। ছবি: সংগৃহীত

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ফরিদ হোসেন মিঞা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার হাইকোর্ট একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা ১০টি টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে তালিকা প্রকাশ করেছি। দৃশ্যমান স্থানে তালিকা টানিয়ে রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে জনসাধারণ সঠিক মূল্যে পরীক্ষা করাতে পারে।’

অধিকাংশ হাসপাতালে দৃশ্যমান স্থানে তালিকা না থাকা প্রসঙ্গে ফরিদ মিঞা বলেন, যারা এখনও তালিকা টানায়নি, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর