চুক্তির বাইরেও বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে করোনাভাইরাসের টিকা দেবে ভারত। ২৫ জানুয়ারির আগে যেকোনো দিন এই টিকা দেশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে টিকা বিষয়ে ‘মিট দ্য রিপোর্টার’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে উপহার স্বরূপ টিকা দেশে আসবে যেকোনো দিন। আমরা যে টিকা কিনছি সেটা ২৫ জানুয়ারি পর আসলেও উপহারের টিকা আগেই আসবে। যেহেতু এটা সরকারি বিষয় যে কারণে এটা খুব তাড়াতাড়ি আসবে।’
উপহারের বাইরে চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনবে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি দেশে পৌঁছানোর কথা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে।
অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়া ভারতে নিজেদের উদ্ভাবিত ‘কোভ্যাক্সিন’ নামে করোনা প্রতিরোধী আরও একটি টিকা রয়েছে।
দেশটির সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে কোন টিকা দিচ্ছে, কী পরিমান দিচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, বিষয়টি এখনও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা করা হচ্ছে অক্সফোর্ডের টিকাই দেবে।
বিশ্বের অনেক দেশে এরই মধ্যে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ দেশই দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মানির অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা। এ ছাড়া রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, রাশিয়ার স্পুতনিক ও চীনের সিনোভ্যাক্স টিকা।
টিকা নেয়ার পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
অক্সফোর্ডের টিকার বড় পরিসরের প্রয়োগ শুরু হয়েছে ভারতেই। এই টিকা প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশেও নিবন্ধন শুরু ২৬ জানুয়ারি থেকে।
করোনার টিকা নিয়ে কয়েকটি দেশ থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর মুখ অবশ হওয়ার উপসর্গে ভুগেছেন ইসরায়েলের ১৩ জন নাগরিক।
টিকা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই নরওয়েতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ২৩ প্রবীণের। অসুস্থ হয়েছেন আরও অনেকে। এ ছাড়া ভারতে টিকা নেয়ার পর এক ওয়ার্ড বয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জাহিদ মালেক জানালেন, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিতে নিবন্ধিতদের হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টিকা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান৷ তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী সেটি নিয়ে এখনও অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে৷ সে কারণে হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টিকা দেয়া হবে। টিকা নেয়ার পর যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে।’
করোনার টিকা বিষয়ে মিট দ্য প্রেসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: নিউজবাংলা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়াও রাশিয়ার স্পুতনিক ও চীনের সিনোভ্যাক টিকা পেতেও যোগাযোগ শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে রাশিয়া সরকারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা হয়েছে।
করোনা সংকট মোকাবিলায় সাফল্য দেখানোয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বাংলাদেশের প্রশংসা করছে বলে জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
‘গত দুই দিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেই চিঠিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সক্ষম হয়েছে জানিয়ে প্রশংসা করা হয়েছে। করোনার মতো টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণ সঠিকভাবে করতে পারব বলেও তারা আশা প্রকাশ করেছে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী জানান, শুরুতে পিপিই সংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিপিই রপ্তানি করছে।
জোর গলায় জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমেরিকার ইউরোপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাদের হাসপাতালগুলোতে সিট পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতি মধ্যে বাংলাদেশ অনেক ভালো রয়েছে।’
দেশে গত কিছুদিন ধরে করোনার নতুন সংক্রমণ অনেকটাই কমে এসেছে। ছবি: নিউজবাংলা
দেশে গত কিছু দিন ধরে করোনার সংক্রমণ হার অনেকটাই নিম্নগামী। এমন অবস্থায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে করোনোর দ্বিতীয় ঢেউ কবে আসছে কেউ জানে না। দেশে করোনার শনাক্তের হার কমে আসছে, শনাক্তের হার ৫ শনাক্তের নিচে নেমে আসছে মৃত্যু হারও কমে আসবে।’
জাহিদ মালেক জানান, করোনার মধ্যে সবচেয়ে ভালো কাজে দিয়েছে টেলিমেডিসিন। এর মধ্য দিয়ে লকডাউনের মধ্যেও জেলা উপজেলা পর্যায়ের রোগীদের চিকিৎসা সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেখা গেছে। এই কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।