বড়দের তুলনায় শিশুদের শ্বাসকষ্টে ভোগার সম্ভাবনা বেশি। তার অন্যতম কারণ শিশুদের শ্বাসনালির বিস্তার বড়দের তুলনায় অনেক কম। সে কারণে অল্প পরিমাণে কফ বা মিউকাস নিঃসরণ হলেই সেগুলি বন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া বুকের ভিতর বাতাস যাতায়াত করার যে অসংখ্য নালি আছে, শিশুদের ক্ষেত্রে সেগুলো গঠনগতভাবে অপরিণত থাকার কারণে বন্ধ হয়ে যাবার প্রবণতা বেশি থাকে।
কেন হয়
আমাদের শ্বাসতন্ত্র শুরু হচ্ছে নাসিকাছিদ্র দিয়ে। তারপরে নাসাগহ্বর, ল্যারিংস হয়ে টিউবের মতো স্বরযন্ত্র, বড় শ্বাসের নল যা ক্রমাগত বিভক্ত হতে হতে সূক্ষ্ম শ্বাসনালি তৈরি করে। এগুলোর মাধ্যমে বাতাস গিয়ে পৌঁছায় ফুসফুসের অসংখ্য ছোট্ট থলিতে। যেখান থেকে রক্ত জালিকার মধ্যে অক্সিজেন শোষিত হয় আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেরিয়ে যায়। এই এতগুলি জায়গার মধ্যে যে কোনো জায়গায় বাধা পড়লেই শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
তাছাড়া জীবাণুঘটিত শ্বাসকষ্টই হচ্ছে খুব ছোট্ট শিশুর শ্বাসকষ্টের প্রধাণ কারণ। বিশেষ করে শীত ও বসন্তকালে এই ভাইরাল সংক্রমণ থেকে বেশি শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আজকাল বাতাসে দূষণের পরিমাণ যত বাড়ছে, শিশুদের মধ্যে হাঁপানির পরিমাণ ততই বাড়ছে।
হাঁপানি মূলত এলার্জিজনিত রোগ হলেও ভাইরাল সংক্রমণ থেকেও হতে পারে। বংশে হাঁপানির উদাহরণ থাকলে শিশুর হাঁপানি হতে পারে। শিশুকে খাওয়ানোর সময় শ্বাসনালিতে দুধ বা তরল খাদ্য চলে যাওয়া থেকে মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সর্দি কাশিতে ভুগতে থাকা শিশু কিংবা কম ওজনের অপরিণত শিশুকে খাওয়ানোর সময় এমনটা হয়। আবার এক বছরের উপরের শিশুরা বাদাম বা এ ধরনের কিছু শ্বাসনালিতে ঢুকিয়ে ফেললে তাৎক্ষণিক শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
লক্ষণ
মাকে সবসময় শিশুর দিকে নজর রাখতে হবে। যদি কখনও দেখা যায়, শিশু (৩-৪ মাসের শিশুর ক্ষেত্রে) বুকের দুধ টেনে খেতে পারছে না, হাত পা ছুঁড়ে খেলার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, হাত-পা ও ঠোঁট নীল দেখাচ্ছে, দুই পাজরের মধ্যবর্তী অংশ শ্বাস নেবার সময় ভিতরে ঢুকে ঢুকে যাচ্ছে, শ্বাস নেবার সময় নাক ফুলে যাচ্ছে, নিঃশ্বাস ফেলার সময় গোঙানির মতো শব্দ হচ্ছে, শ্বাসের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হচ্ছে, তাহলে ধরে নিতে পারেন শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
শ্বাসকষ্ট হলে যা করবেন
শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নিজে নিজে বা বন্ধু-প্রতিবেশীদের পরামর্শে শিশুর চিকিৎসা না করানোই ভালো।
তারপরও হাতের কাছে কিছু জিনিস রাখতে পারেন। সাধারণত নাক বন্ধ হয়ে শ্বাসকষ্ট হলে নাক খোলার জন্য এক ধরনের ড্রপার পাওয়া যায়। এটা নাক শুকিয়ে ফেলে শ্বাস নেওয়া সহজ করে দেয়। তবে এটা দেবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এই ধরনের ড্রপার কখনও তিন চার দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে শ্বাসকষ্টের শিশুকে নেবুলাইজার কিংবা ইনহেলার দেয়া যেতে পারে।
শ্বাসকষ্টের শিশুকে সবসময় গরম পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে। ঘরের পর্দা খুলে রোদ আসতে দিতে হবে। প্রয়োজনে হিটার দিয়ে ঘর গরম করতে হবে। বুকের দুধ খাইয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি বয়স অনুয়ায়ী শিশুকে অন্যান্য তরল খাবার দিতে হবে।
রোদে নিয়ে শিশুকে তেল মালিশ, জোর করে খাওয়ানো কিংবা বুকের দুধ না খাইয়ে অন্য দুধ খাওয়ানো শ্বাসকষ্টে ভোগা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এমনটা করা যাবে না।