দেশের সব এলাকায় করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিতে প্রতি জেলায় সাত লাখ ও প্রতি উপজেলায় দুই লাখ ডোজ মজুত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে টিকা বিষয়ক এক জরুরি সভা শেষে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্টোরেজের খোঁজ খবর নিয়েছি। প্রতি জেলায় স্টোরিং ফ্যাসিলিটি রয়েছে। এক একটা জেলায় সাত লাখের অধিক ভ্যাকসিন ডোজ রাখতে পারব এবং প্রতিটি উপজেলায় প্রায় দুই লাখের অধিক ডোজ রাখতে পারবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, টিকা প্রয়োগে ৪২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার। এই কর্মীদের মধ্যে ছয় জন করে মোট সাত হাজার দল গঠন করা হবে। প্রতি দিল দিনে ১৫০ জন মানুষের দেহে টিকা প্রয়োগ করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘টিকা বিতরণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং টিকা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করতে একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এই অ্যাপের মাধ্যমে টিকা পেতে সবাইকে নিবন্ধন করতে হবে।’
টিকা বিতরণে ফ্রন্টলাইন ফাইটার তথা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা আবারও পুনর্ব্যক্ত করলেন মন্ত্রী।
সেই সঙ্গে জানালেন, সরকার ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানালেও সেখান থেকে সরে আসা হয়েছে। ৫৫ বছর বয়সীদেরও অগ্রাধিকার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্বের অনেক দেশে এরই মধ্যে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ দেশই দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মানির অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা। এ ছাড়া রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, রাশিয়ার স্পুতনিক ও চীনের সিনোভ্যাক্স টিকা।
তবে বাংলাদেশ আস্থা রাখছে অক্সফোর্ডের টিকার ওপরই। এই টিকা ভারতীয় উপমহাদেশে উৎপাদন করবে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। তাদের কাছ থেকে তিন কোটি টিকা কিনবে বাংলাদেশ।
এ জন্য ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় গত ৫ নভেম্বর, ১৩ ডিসেম্বর হয় ক্রয় চুক্তি। চুক্তির পক্ষ তিনটি- বাংলাদেশ সরকার, সিরাম ও বেক্সিমকো।
২৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকার ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি দেশে পৌঁছার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংবাদ সম্মেলনে করোনার টিকা সম্পর্কীত হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: নিউজবাংলা
টিকা পাওয়া নিয়ে তাই বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। জানান, ১৮ বছরের নিচে যারা, যারা খুব অসুস্থ, আর গর্ভবতী মায়েরা টিকা পাওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে। তবে প্রবাসী বাঙালি যারা দেশে আছেন, তারাও টিকা পাবে।
অক্সফোর্ডের টিকার পাশাপাশি কোভেক্স জোটের মাধ্যমে ফাইজারের আট লাখ টিকা পাওয়া যাবে বলেও জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিকা আনতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের টিকা আনতে পারবে। সে জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।’
মন্ত্রী জানান, সেই নীতিমালার আলোকে বেসরকারি খাত কিভাবে তাদের টিকা বিক্রি প্রয়োগ করতে পারবে তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে। ওই নীতিমালায় কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে টিকা দেয়া হবে সেটাও জানিয়ে দেয়া হবে।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গাব্রিয়েসাস বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।