দেশের সব মানুষের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করতে এ খাতে বরাদ্দ ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বাড়াল সরকার। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এ সংশোধনী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মঙ্গলবার অনুমোদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ’ শিরোনামের এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল গত এপ্রিলে। সরকার সবার জন্য টিকা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। সে জন্য টিকা আমদানিতে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হলো।
এই অতিরিক্ত অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ২৭ কোটি ডলার দেবে। আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৭২ কোটি টাকার যোগান দেবে বলে জানান মন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী টিকা পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি এবং বিশ্বাস করি, যথাসময়ে টিকা পাওয়া যাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবুল কালাম আজাদ অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানি করা হচ্ছে।’
অগ্রাধিকার বিবেচনায় স্বাস্থ্যকর্মী, শ্রমঘন এলাকা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গণমাধ্যম কর্মীসহ সবাইকে পর্যাক্রমে এই টিকার আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় টিকা কেনার জন্য খরচ হবে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা অবকাঠামো উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও টিকা পৌঁছে দিতে খরচ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য এপ্রিলে এ প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। এখন প্রকল্পের খরচ ও পরিসর বাড়িয়ে টিকা আমদানি করা হবে এবং জনগণকে টিকা দেয়া হবে। এ জন্য প্রকল্প সংশোধন করে খরচ ছয় গুণ বাড়ানো হলো।
ওই প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হবে টিকা কেনায়। এ জন্য দরকার ৩ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। আর টিকা কিনে তা গ্রামগঞ্জে পরিবহনের জন্য বরাদ্দ ৭৬৫ কোটি টাকা। আমদানি করা টিকা সংরক্ষণ করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা।
টিকা কীভাবে দেওয়া হবে, কী ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি কেমন হবে—এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ খরচ ধরা হয়েছে ৯৩ কোটি টাকা।
টিকা আমদানির সময়ে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এবং কমিশন বাবদ আরও কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে টিকা দেশে আসার পর তা সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় শুধু টিকা কেনা ও বিতরণেই সীমাবদ্ধ নয়। করোনা রোগীদের চিকিৎসাতেও খরচ করা হবে। এর আওতায় চিকিৎসাসামগ্রী কিনতে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। টিকা দেয়ার সময় স্বাস্থ্যকর্মীরা এসব চিকিৎসাসামগ্রী ব্যবহার করবেন।
এ ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি যন্ত্রপাতি কেনায় ৩৭০ কোটি টাকা, করোনার নমুনা সংগ্রহে ১৮ কোটি টাকা, পিসিআর কিট, র্যাপিড টেস্ট কিট কেনাকাটায় ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ প্রকল্পের আওতায় টিকা কেনার বিষয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি জনবল নিয়োগ এবং হাসপাতালের জরুরি যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।