যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রেজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকা অনুমোদন দেয়ায় বাংলাদেশে ধারণার চেয়ে আগে টিকা আসবে বলে আশাবাদী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, টিকা আসবে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে। তবে যুক্তরাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের পর আরও দুই সপ্তাহ আগেই টিকা পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মডার্না, ফাইজার ও স্পুতনিকের টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও বাংলাদেশ অপেক্ষায় ছিল অক্সফোর্ডের টিকার। ভারতের প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি আছে অক্সেফোর্ডের। আর তিন কোটি টিকা আনতে সিরামের সঙ্গে চুক্তি করেছে ঢাকা।
এই চুক্তি হলেও টিকা দেশে আসার অনিশ্চয়তার কারণ ছিল অনুমোদন না পাওয়া। যুক্তরাজ্য সরকার যে সমস্যার সমাধান করেছে বুধবারই।
কয়েক ঘণ্টা পর রাজধানীতে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন টিকা নিয়ে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আজ যুক্তরাজ্য সরকার অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদন দিয়েছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য সুখবর। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন হওয়া মাত্রই সেটি ভারতের পাশাপাশি আমরাও পেয়ে যাব।’
অনুমোদনের পর অক্সফোর্ডের টিকা নিচ্ছেন এক জন। ফাইল ছবি
অক্সেফোর্ডের এই টিকার পাশাপাশি টিকা বিতরণে আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভির কাছ থেকে পৌনে ছয় কোটি টিকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যা পাওয়া যাবে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে করোনার টিকা বিতরণে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ কোভেক্সের মাধ্যমে এই টিকা আসবে অক্সফোর্ডের টিকার চেয়ে কম টাকায়।
অক্সেফোর্ডের টিকার প্রতিটির দাম পড়বে পাঁচ ডলার। তবে গ্যাভি টিকা দেবে ভর্তুকি মূল্যে। এই টিকার দাম আড়াই ডলারের কিছু বেশি হতে পারে।
একেক জনকে টিকা দিতে হবে দুটি করে। এই দুটি উদ্যোগ মিলিয়ে ১০ কোটি টিকার সংস্থান হলো। ফলে আরও টিকা লাগবে।
অবশ্য ১৭ কোটি মানুষের দেশে সবার টিকা লাগবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকার যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে, বাংলাদেশ তা মেনেই প্রয়োগ করবে। ফলে সাড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়ার দরকার পড়বে না।
মন্ত্রী বলেন, ‘১৮ বছরের নিচে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষকে এবং গর্ভবতী প্রায় ৩৫ লাখ মায়েদের ভ্যাকসিন দেয়া না লাগলে পাঁচ-ছয় কোটি ভ্যাকসিন প্রয়োগেই দেশ অনেকটা নিরাপদ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া ব্লুমবার্গ করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের যে প্রশংসা করেছে, তাকে স্বীকৃতি হিসেবে দেখার কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ব্লুমবার্গ কেবল দেশের অর্থনৈতিক সফলতা দেখেই রিপোর্টটি করেনি। প্রতিষ্ঠানটি করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় জনবল, অবকাঠামো, টিকাদান সক্ষমতা, চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি মেট্রিক্স বিবেচনা করে এই ফলাফল ঘোষণা করেছে। কাজেই এই ফলাফল আমাদের জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’
তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আরও গতিশীলভাবে দায়িত্ব পালনে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ব্লুমবার্গ করোনা মোকাবিলায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে ২০তম ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম স্থানে রেখেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আলী নূর, চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক এম এ আজিজ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন।