করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রায় নয় মাস স্থগিত থাকা টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ টিকা যারা দেবেন, তারা বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘটে আছেন।
টানা ১৬ দিন ধরে পদমর্যাদা ও বেতন আপগ্রেডেশনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরিত পালন করছে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ইন্সপেক্টরাল অ্যাসোসিয়েশন। ইতোমধ্যে হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
এ পরিস্থিতি সমাধানে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আন্দোলনকর্মীদের দফায় দফায় বৈঠকেও কোনো সমাধান মেলেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান না হলে তিন কোটি শিশুকে ঠিক সময়ে হাম-রুবেলা টিকা দেয়া সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় মাঠ কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, গত ২০ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২৬ নভেম্বর থেকে সারা দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় ২৬ হাজার মাঠকর্মী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে এই দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। আশ্বাসেই ২২ বছর পার হয়েছে। কোনো সমাধান মেলেনি। আমাদের সমপর্যায়ে অন্য বিভাগের কর্মীদের পদোন্নতি দিয়ে একাধিক ধাপ উপরে নেওয়া হয়েছে।
‘আমাদের দাবি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন ১১, ১২, ১৩তম গ্রেডে নিতে হবে। বর্তমানে তারা রয়েছ ১৬-১৫-১৪তম গ্রেডে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার থেকে হাম-রুবেলা কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি। আমাদের দাবিতে আমরা অনড়।
‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ বছর আগে এই দাবি বাস্তায়নে আশ্বাস দিয়েছিল। তবে সরকারের আমলামন্ত্রিক জটিলতা কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।’
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রবিউল আলম খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। আমরা আন্দোলনে থাকার কারণে সিটি করপোরেশনে কর্মীদের দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে শুরু সিটি করপোরেশনের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হবে। গ্রামের শিশুরা বঞ্চিত হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্দোলন যৌক্তিক। এ বিষয়ে সরকারও ভাবছে। তবে এই দাবি বাস্তবায়নে কিছুদিন সময় লাগবে।
‘আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ কর্মকর্তাদের নিয়ে বসছি। তাদের মধ্যেও কিছু মতভেদ রয়েছে। এক পক্ষ আমাদেরকে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আন্দোলনে থাকছে না। অন্য পক্ষ বলছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরবে না।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মওলা বকস চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাল (শনিবার) থেকে আমরা সিটি করপোরেশনের কর্মীদের নিয়ে টিকা কর্মসূচি শুরু করছি। তবে যারা যখনই আন্দোলন স্থগিত করবে, তখন তাদের আগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।’
যদি আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর বলতে পারবে।