বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় নারী বিশ্বনেতারা কোমল, পুরুষ রুক্ষ

  •    
  • ২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৭:৪০

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় সব নেতাই তাদের বক্তব্যে অর্থনীতির ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন। তবে নারী নেতাদের মনোযোগ ছিল ব্যক্তি পর্যায়ের অর্থনীতি ও ছোট ব্যবসা ক্ষেত্রের দিকে। আর পুরুষ নেতৃত্ব জোর দিয়েছে বড় ব্যবসা ও করপোরেট অর্থনীতির দিকে।

করোনাভারাসের মহামারিতে সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের পদক্ষেপ নিয়ে চলছে চুলচেরা নানান বিশ্লেষণ। কারা কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করছেন, কে কতটা সফল- সেই পর্যালোচনাও চলছে বিশ্বব্যাপী।

এর মধ্যে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা মহামারি নিয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় সহানুভূতি ও সামাজিক ঐক্যের ওপর বেশি জোর দিয়েছেন নারী নেতারা। বিপরীতে পুরুষ নেতারা ভয় ছড়ানো অথবা অন্যের ওপর দায় চাপানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।

চারজন গবেষকের এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রি-প্রিন্ট প্ল্যাটফর্ম মেডআর্কাইভে। বিভিন্ন ধরনের গবেষণা আন্তর্জাতিক কোনো জার্নালে প্রকাশের আগে ত্রুটি-বিচ্যুতি যাচাইয়ে প্রি-প্রিন্ট প্ল্যাটফর্ম প্রকাশ হয়ে থাকে।   

গবেষণার জন্য ২০টি দেশ বেছে নেয়া হয়েছে, যার ১০টিতে রাষ্ট্র অথবা সরকারপ্রধান হিসেবে আছেন নারীরা। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, বলিভিয়া, ব্রাজিল, ডমিনিকান রিপাবলিক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, নাইজার, নরওয়ে, রাশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, স্কটল্যান্ড, সিন্ট মার্টিন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান।

২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে এই ২০ দেশের শীর্ষ নেতদের দেয়া মোট ১২২টি বক্তব্য ও বিবৃতি বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকেরা। এর মধ্যে ৬১টি বক্তব্য-বিবৃতি নারী নেতাদের। এর মধ্যে যাদের ক্ষেত্রে দুটির কম বক্তব্য পাওয়া গেছে সেখানে সরকারি ভাষ্যগুলোও বিচার করেছেন গবেষকেরা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে যে ভাষণটি দিয়েছিলেন, সেটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই গবেষণায়।

অনুসন্ধানে পাঁচটি বিষয়ের দিকে নজর দিয়েছে গবেষক দল। এগুলো হলো- অর্থনীতি ও আর্থিক ত্রাণ, সমাজকল্যাণ ও অসহায় জনগোষ্ঠী, জাতীয়তাবোধ, দায়িত্ব ও পিতৃতন্ত্র এবং আবেগীয় আহ্বান।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় সব নেতাই তাদের বক্তব্যে অর্থনীতির ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন। তবে নারী নেতাদের মনোযোগ ছিল ব্যক্তি পর্যায়ের অর্থনীতি ও ছোট ব্যবসা ক্ষেত্রের দিকে। আর পুরুষ নেতৃত্ব জোর দিয়েছে বড় ব্যবসা ও করপোরেট অর্থনীতির দিকে।

মহামারি স্থানীয় বা ব্যক্তিপর্যায়ে কীভাবে জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে এবং সামাজিক সুরক্ষার আওতা কী করে বাড়ানো যায়- সে বিষয়টি বারবার সামনে এনেছেন নারী নেতারা। গুরুত্ব পেয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য ও পারিবারিক সহিংসতার মতো বিষয়গুলোও।

গবেষণাপত্রে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৫ মার্চের ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, যেখানে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন। ওই ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ সহায়তা প্রদান করা হবে।”

গবেষণায় দেখা গেছে, একমাত্র নারী নেতারাই মহামারি অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের নিয়ে কথা বলেছেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের পরিচর্যার পাশাপাশি পারিবারিক যত্নের দায়বদ্ধতাও তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

স্কটল্যান্ডের নারী ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন যেখানে কথা বলেছেন শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প ও ফ্রান্সের ইমানুয়েল মাখোঁর বেশিরভাগ কথাই ছিল বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও তাদের সিইওদের নিয়ে।

করোনা মোকাবিলার বিষয়টি সামনে আনতে বিশ্বনেতাদের প্রায় সবাই যুদ্ধসম্পর্কিত রূপক শব্দ ব্যবহার করেছেন। গবেষণার জন্য বেছে নেয়া ২০ নেতার মধ্যে ১৭ জনই ব্যবহার করেছেন এ ধরনের শব্দ। তবে পুরুষ নেতাদের বক্তব্যে এসব শব্দের ছড়াছড়ি যেভাবে দেখা গেছে, নারীরা সে তুলনায় ছিলেন অনেক সংযত।

নারীরা অনেক বেশি ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা সহানুভূতিশীল ভাষা ব্যবহার করেছেন, যার লক্ষ্য ছিল আক্রান্তের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ ও সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি।

গবেষক দলটি বলছে, করোনাভাইরাস সংকটে নারী ও পুরুষ নেতৃত্ব কতটা ভালো সাড়া দিয়েছে সেটি যাচাই করা তাদের লক্ষ্য ছিল না। গবেষণার সীমাবদ্ধতার দিকগুলো স্বীকার করে তারা বলছে, জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি দেশের বাস্তবতা আলাদা। আর এই বাস্তবতাই নেতাদের প্রতিক্রিয়া ও বক্তব্যের কৌশলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষণাপত্রের সহ লেখক বেসরকারি সংস্থা উইমেন ইন গ্লোবাল হেলথের গবেষণা সহযোগী সারা ডাডা গবেষণার ফলাফলে নিজেই বিস্মিত। তিনি বলছেন, ‘পুরুষ নেতারা তাদের বক্তব্যে ভয়-ভীতি দেখানো অথবা অন্যের ওপর দায় চাপানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে, নারীরা ব্যক্তিগত উদাহরণ ও সহানুভূতিকে সামনে এনে সামাজিক ঐক্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’   

আরেক সহ লেখক ফ্লোরিডা কলেজ অফ পাবলিক হেলথ ইউনিভার্সিটির উইমেন ইন গ্লোবাল হেলথের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান ড. মারলিন জোয়ানি বেওয়া বলেন, ‘এটা খুব পরিষ্কার, এই মহামারিতে নারীরা সাম্যের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা পদ্ধতিতে যোগাযোগ-কৌশল গ্রহণ করেছেন। তাদের কৌশলের মধ্যে সমন্বিত নীতিগত সাড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কিন্তু সামাজিক পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত ছিল।’

নারী ও পুরুষ নেতাদের বক্তব্যের ধরনে পার্থক্য কেন- তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের অকসিডেন্টাল কলেজের রাজনীতির সহযোগী অধ্যাপক জেনিফার এম পিসকোপো।

তিনি বলছেন, ‘পুরুষ নেতাদের চেয়ে নারীদের বক্তব্য আলাদা হওয়ার কারণ শুধু স্বভাবজাত নয়, ভোটাররাও নারীদের কাছ থেকে নমনীয় বক্তব্যই প্রত্যাশা করে এবং সেটা পাওয়া না গেলে ভোটাররা মনক্ষুণ্নও হয়।

‘এখানে নেতাদের রাজনৈতিক নেতাদের মতাদর্শের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। যেসব নেতার বক্তব্যে জাতীয়তাবাদ ও যুদ্ধসম্পর্কিত শব্দের প্রাধান্য দেখা গেছে তারা সাধারণত ডানঘেঁষা রাজনৈতিক দল থেকে এসেছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর