বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা: বাংলাদেশ নিয়ে চীনা দাবি নাকচ বিজ্ঞানীদের

  •    
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:৫৯

চীনের একদল গবেষক সম্প্রতি দাবি করেন, ২০১৯ সালের গ্রীষ্মেই সম্ভবত করোনার জীবাণু ছড়িয়েছিল। আর সেটা ছড়িয়ে থাকতে পারে ভারত অথবা বাংলাদেশ থেকে। তবে বাংলাদেশের ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি ঠেকাতে ব্যর্থ চীন বিশ্বের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছে।

কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী ভাইরাসটি (সার্স কভ টু) ভারত অথবা বাংলাদেশ অঞ্চলে প্রথম মানবদেহে ছড়িয়ে থাকতে পারে- চীনের একদল গবেষকের এমন দাবিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। গবেষণার পদ্ধতি নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন তাদের।

বাংলাদেশের ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদম শুরুতে মহামারি ঠেকাতে ব্যর্থ চীন এখন বিশ্বের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছে। এ জন্য বিভিন্ন সময়ে তারা বিভ্রান্তিকর গবেষণার তথ্য প্রকাশ করছে।  

চীনের একদল গবেষক সম্প্রতি দাবি করেন, ২০১৯ সালের গ্রীষ্মেই সম্ভবত করোনার জীবাণু ছড়িয়েছিল। আর সেটা ছড়িয়ে থাকতে পারে ভারত অথবা বাংলাদেশ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, চেক রিপাবলিক, রাশিয়া ও সার্বিয়াকেও সম্ভাব্য উৎসের তালিকায় রাখা হয়েছে।

চীনা বিজ্ঞানীদের ধারণা, এসব দেশের কোনো একটি থেকে কোভিডের ভাইরাস চীনের উহানে বাহিত হয়েছে। আর উহানেই এটা প্রথম শনাক্ত হয়।

চিকিৎসা বিষয়ে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত সাময়িকী ল্যানসেট-এর একটি প্রি-প্রিন্ট প্ল্যাটফর্মে গত ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত হয় গবেষণা নিবন্ধটি।

 

চীনের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিন নিয়ে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন গবেষকের সঙ্গে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণা নিবন্ধটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের। এর উপর ভিত্তি করে কিছু বলা যায় না।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘তারা (চীনা গবেষক দল) একটি মাত্র ফাইন্ডিংস নিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। আমরা সেগুলো অনুসন্ধান করতে চাইলে সারা পৃথিবীর সব জায়গা থেকে জেনোম সিকোয়েন্স কালেক্ট করতে হবে। এটা মিউটেশনের সংখ্যা দিয়ে হবে না। কোন পয়েন্টে এই মিউটেশন হয়েছে সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

চীনা গবেষকেরা বলেছেন, ‘২০১৯ সালের মে থেকে জুনের মধ্যে উত্তর-মধ্য ভারত ও পাকিস্তানে তীব্র দাবদাহ বয়ে গেছে। এর ফলে এ অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছিল। পানি সংকটের কারণে বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর মধ্যে খাবার পানি নিয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত শুরু হয়। এ থেকে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংস্পর্শের সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবে বেড়েছে।’

তবে এই দাবিকে ‘হাস্যকর’ মনে করছেন বাংলাদেশে কোভিড ১৯ এর জন্য দায়ী ভাইরাসের প্রথম জিনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীনের গবেষণা দল যে দাবি করছে, সেটি প্রমাণ করতে হলে তারা যে প্রাণীর নাম বলেছে সেই প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ভারতে এই প্রাণী নিশ্চয়ই রয়েছে। ওখান থেকে নুমনা নিয়ে সিকোয়েন্স পরীক্ষা করতে হবে বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য।’

 

পুরো গবেষণা পদ্ধতিই ভুল- মন্তব্য করে এই অণুজীববিজ্ঞানী বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রায় ৫০০ জিনোম সিকোয়েন্স হয়ে গেছে। ভারতে দুই হাজারের উপরে জিনোম সিকোয়েন্স হয়েছে। পাকিস্তানেও এমন হয়েছে। সবগুলো জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে দেখা গেছে এই ভাইরাস চীনের উহান শহর থেকে এসেছে।’

গবেষণার পদ্ধতিগত ক্রটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘জিনোম সিকোয়েন্সের পরিবর্তন নির্ভর করে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের উপর। চীনের গবেষকেরা যে মডেল ব্যবহার করেছেন সেটির নাম হল পার্সিমন মডেল। এই মডেল আজকাল আর খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না। এটি অনেক পুরানো একটা মডেল।  

‘আমরা এখন অনেক নতুন মডেল নিয়ে কাজ করে থাকি। আমরা দেখার চেষ্টা করি একটা এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স জিন বাংলাদেশে কখন এসেছে, কীভাবে এসেছে। এটা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কেনো তারা মাত্র চার হাজার জিন নিয়ে কাজ করল বা কেনো পুরোন মডেল ব্যবহার করল সেটি ভেবে দেখার বিষয়।’

সেজুঁতির পাল্টা প্রশ্ন, ‘মাত্র চার হাজার সিকোয়েন্স নিয়ে তারা কয়টা মিউটেশন বের করতে পারবে, যেখানে লাখ লাখ সিকোয়েন্স রয়ে গেছে?

‘শুধু ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রচুর সিকোয়েন্স নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে উহান শহর থেকেই করোনার জীবাণু ছড়িয়েছে।’

বাংলাদেশে প্রথম দিকে (মার্চে) যাদের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল তাদের সবার সঙ্গে বিদেশের কোনো না কোনো সংযোগ পাওয়া গিয়েছিল বলেও মনে করিয়ে দেন সেজুঁতি সাহা। তিনি বলেন, এর মধ্যে দিয়েও প্রমাণিত হয় করোনাভাইরাসটি বাংলাদেশে প্রথম মানবদেহে সংক্রমিত হয়নি।   

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীনা বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা আসলে বাস্তবে কিছুই হয়নি।

‘এটা পক্ষপাতমূলক অনেকটা। যে সিকোয়েন্সগুলা নিজেদের কাজে লাগে শুধু সেগুলোই বিশ্লেষণ করেছে তারা। জেনোম সিকোয়েন্স নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে সেখানে জানতে হবে কোন ভাইরাসের হাই মিউটেশন হয় আবার কোন ভাইরাসের স্লো মিউটেশন হয়। এটা সারা পৃথিবীতেই হচ্ছে। আর স্লোগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্লোগুলো নিয়ে তারা কাজ করেছে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘এই গবেষণায় কোনো বিশেষত্ব নাই, কারণ প্রত্যেক ক্ষেত্রে হোস্ট স্ট্রেস বলে একটা কথা আছে। কিছু সিকোয়েন্স পরিবর্তন হয় শুধু হোস্টের উপর নির্ভর করে। সেটা ভাইরাসের চরিত্রে কোনো প্রভাব ফেলে না।’

অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের জিন মানচিত্র করা পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীনের গবেষণাটি তো এখন পর্যন্ত রিভিউই হয়নি। তারা যে পদ্ধতি ব্যবহার করে এই গবেষণা করেছে সেটা কতখানি ঠিক সেটাও জানার বিষয়। পদ্ধতিটা উদ্দেশ্যমূলক কিনা সে প্রশ্ন থেকে যায়।

‘আমরা তো দেশের মোট জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে দেখিনি। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জেনোম সিকোয়েন্স করেছে, তাদের কাছে আলাদা আলাদা ফলাফল আছে। সবগুলো নিয়ে বসে একসাথে যে বিশ্লেষণ করা যাবে, সেটা তো আমাদের এখানো করা হয়নি। তাই এটা নিয়ে তো হুট করে কিছু বলা যাবে না। ’

এ বিভাগের আরো খবর