বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাস্ক না পরার ‘যত কারণ’

  •    
  • ২২ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:৪৭

মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে প্রথমে জারি করা হয় ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি। অর্থাৎ মাস্ক না পরলে সেবা মিলবে না। এতেও যখন কাজ হচ্ছে না, তখন দেশজুড়ে চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। প্রতিদিনই জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সেই আগের মতোই।

করোনাকালে মাস্ক না পরে জরিমানা গুণছেন অনেক মানুষ। অভিযান চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের। এর মধ্যেও অনীহা স্পষ্ট।

কারণ কী কী?

একজন তরুণী বলছিলেন তার স্কিনে সমস্যা হয়। অন্য একজনের মুখ ঘামে।

একজন দুপুরে ভাত খাবেন। তার আগে একটু ‘হাওয়া খেয়ে নিচ্ছিলেন।’

রাজধানীর ফার্মগেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশ, মহাখালী, মাটিকাটা, নিকুঞ্জ এলাকায় মাস্ক ছাড়া ঘুরতে দেখা মানুষদের জিজ্ঞাসা করলে এ রকম আরও নানা জবাব পাওয়া গেল।

এদের একটি অংশ আবার মাস্ক পরছেন না কেন, এ প্রশ্ন শুনে খুবই বিরক্ত হন।

কিন্তু প্রশাসনের লোকজনের কাছে ধরা পড়লে বিরক্তি দেখিয়ে তো পার পাওয়া যাবে না। জরিমানা নির্ঘাত। তখন কী হবে?

এমন প্রশ্ন শুনে বিরক্তি আবার রাগে পরিণত হতে দেখা গেল কয়েকজনের ক্ষেত্রে।

মাস্ক পরলেই যে করোনা হবে না, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মাস্ক পরতে উৎসাহী করছেন।

সরকার অবশ্য আর উৎসাহের মধ্যে রাখতে চাইছে না বিষয়টি। এক রকমের বাধ্যবাধকতার মধ্যেই ফেলতে চাইছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের পর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে জারি করা আদেশ তুলে নেয়া হয়নি। তবে আগস্টের পর থেকে করোনার সংক্রমণ যখন নিম্নমুখী, তখন এ নিয়ে আর চাপ দেয়া হয়নি সেভাবে। তবে শীতে করোনার দ্বিতীয় ধাপের আশঙ্কায় আবার বিষয়টিতে জোর দেয়া হচ্ছে।

মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে প্রথমে জারি করা হয় ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি। অর্থাৎ মাস্ক না পরলে সেবা মিলবে না।

এতেও যখন কাজ হচ্ছে না, তখন দেশজুড়ে চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। প্রতিদিনই জরিমানা করা হচ্ছে।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সেই আগের মতোই।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর নিকুঞ্জে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু করেন ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল কুমার হালদার। অভিযান চলাকালে মাস্কহীন বেশিরভাগ মানুষ বলেছেন, তাদের বাসা কাছে, তাই পরেননি; অনেকক্ষণ পরেছেন তাই, খুলে রেখেছেন। কেউ বলেছেন, ভুল হয়েছে, আর কখনও হবে না।

উজ্জ্বল কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবাইকে জরিমানা করছি না। একজন গরিব, যেমন রিকশাচালক, তার মাস্ক নাই; তাকে সচেতন করছি। একই সঙ্গে মাস্ক বিতরণ করছি। আবার একটি ফার্মেসির দোকানি; তাকে আমরা খুবই অল্প পরিমাণে জরিমানা করছি।

‘জরিমানা ফ্যাক্ট না, ১০০ টাকা জরিমানা দিলেও মানুষের মধ্যে গরজ আসবে যে এই টাকায় ১০টা মাস্ক কেনা যেত। এটাই জরুরি।’

কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার পরই বদলে যায় চিত্র।

শুরুটা করা যাক নিকুঞ্জে বিআরটিএ অফিস থেকে। ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে ১২টা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গেছেন ১০ মিনিট আগে। গেটের বাইরে লেখা ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’।

 

মাস্ক না পরেই গেট দিয়ে ঢুকছেন অনেকেই। গেটে যিনি নিরাপত্তাকর্মী, তিনি নিজেও পরেননি মাস্ক।

কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বুক পকেট থেকে বের করে পরে ফেলেন আর বলেন, ‘আমি মাস্ক পরে থাকি। এখনও পরে আছি।’

এ সময় পাশ দিয়ে একজন মাস্ক না পরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘এই মিয়া মাস্ক পরেন।’

গেটের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, রান্নাঘরের সামনে মাস্ক না পরে আড্ডা দিচ্ছেন কয়েকজন।

ডিপোর পাশে একটি অফিস কক্ষে এক কর্মকর্তা কাজ করছিলেন মাস্ক না পরেই। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ সম্পর্কে তিনি নাকি জানেনই না।

পরতে পরতে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরেছিলাম। মাস্ক পরা উচিত।’

গণপরিবহন, বাজার, ব্যাংক, হাসপাতালসহ জনসমাগমস্থলের চিত্রগুলো মোটামুটি একই রকম।

বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক নেই। কেউ বুক পকেটে, কেউ থুতনিতে, কেউ কপালে, কেউ কানে বা শার্টের বোতামে ঝুলিয়ে রেখেছেন মাস্ক।

ফার্মগেট ওভারব্রিজ রাজধানীর একটি ব্যস্ততম জায়গা। ব্রিজে ওঠার আগেই দেখা যায়, একটি থানার সৌজন্যে লেখা ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি’। তবে তা কতজন পড়েছেন না পড়লেও গুরুত্ব দিচ্ছেন, সে প্রশ্ন রয়েই যায়।

মাস্ক না পরে সেখানে জুতা বিক্রি করছিলেন একজন। উচ্চস্বরে কথা বলতে হয়, ডাকাডাকি করতে হয়, তিনি ঝুঁকির কারণ হতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘আগে পরতাম। তারপর দেখি সব খুইল্লা দিছে। তাই গত এক সপ্তাহ ধইরা আর পরি না।’

‘এই থার্ড গেট, মানিকদি, ইসিবি, চইল্লে গেল, চইল্লে গেল, জলদি আসেন’ বলে হাঁক দিচ্ছিলেন ক্যান্টনমেন্টগামী ট্রাস্ট সার্ভিসের বাসশ্রমিক রুহুল আমিন।

দরজার পাশে স্টিকার সাঁটানো, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’। কিন্তু আসলে তারা বাস্তবায়ন করছে ‘নো মাস্ক, সার্ভিস’। খালি মুখে এলে কাউকে বাসে উঠতে বাধা দেয়া হয় না।

রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা তো বেকতেরে (সবাইকে) কই মাস্ক পড়তে। কেউ কেউ রাগ অয়, কেউ আবার কয় বাস ছাড়লে পরবে। আমরা কী করতাম।’

এমন যাত্রীদের একজন আনোয়ারুল হক। বলেন, ‘রোগ শোক এগুলান রাব্বুল আলামিন দেখবেন। তার ইচ্ছাতেই সব হয়।’

মহাখালী কাঁচাবাজারে খাসির মাংস কিনতে এসেছিলেন মধ্যবয়সী একজন। মাস্ক নাই কেন জানতে চাইলেই ক্ষেপে যান। উচ্চস্বরে বলেন, ‘কেউ বলতে পারবে মাস্ক পরলে করোনা হবে না?’

আপনার ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে, ভ্রাম্যমাণ আদালত যে অভিযান চালাচ্ছে। ‘তারা এলে কী বলবেন?’ এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা শান্ত হন। বলেন, ‘তারাও কি বলতে পারবে মাস্ক পরলে করোনা হবে না?’

করোনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রবীণ, ফুসফুসের সমস্যা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি ও এ জাতীয় কো-মরবিডিটি রোগে আক্রান্তরা।

তবে মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষেরই নেই মাস্ক। ভেতরের অবস্থাও একই রকম।

হাসপাতালের সামনেই ফল বিক্রি করছেন আসিফ মিয়া। ক্রেতা সামলাতে পারছেন না এক হাতে।

তিনি বলেন, ‘আমি এক মাস্ক একবারের বেশি পরি না। একটা মাস্ক পরা ছিলাম। বাথরুমে গেছিলাম। ফালায় দিছি। এখন নতুন একটা মাস্ক পরুম।’

যদিও পরে আধা ঘণ্টার মধ্যে তাকে আর মাস্ক পরতে দেখা যায়নি।

তার পাশেই জীবাণুনাশক ও মাস্ক বিক্রি করছেন তায়রা বেগম। তার ‍মুখেরটা জায়গা মতো নাই, রেখে দিছেন থুতনিতে।

তিনি বলেন, ‘ভুল অইয়া গেছে। আর অইব না। আমার শ্বাসকষ্টে সমস্যা; আমি মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে পারি না। তাই খুলে রাখি।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও একই চিত্র। বাইকে বসে গল্প করছেন দুজন। একজনের মাস্ক কানে ঝুলছে। তিনি বলেন, ‘বাইক চালাতে গিয়ে খুলে যায়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাস্ক ছাড়া ঢুকতে মানা। কিন্তু ভেতরের কারও পরোয়া নেই।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের উল্টোপাশে চায়ের দোকান ও আশেপাশে বসে গল্প করছিলেন অনেকে। বেশিরভাগের মুখেই নেই মাস্ক।

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সাবেক দুই শিক্ষার্থী আফ্রিদা আলি ও প্রিয়াংকা রহমান ঘুরতে এসেছেন সেখানে।

প্রিয়াংকা রহমান বলেন, ‘আমি হিজাব পরি; হিজাব দিয়েই মুখ ঢাকি। এখন কথা বলতেছি। তাই খুলে রাখলাম।’

আফ্রিদা আলি বলেন, ‘মাস্ক পরলে আমার স্কিনে সমস্যা হয়। তাই পরি না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, “‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতিটি একেবারেই নতুন। সর্বস্তরে এই মেসেজ এখনও পৌঁছেনি বলে এর বাস্তবিক হার এতটা কম।”

এ বিভাগের আরো খবর