সুন্দর ত্বক আমাদের সবার কাম্য। মেকআপ আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে সুন্দর করে তুললেও চেহারার আসল স্নিগ্ধতা আসে ত্বকের ভেতর থেকেই। ত্বকের সুস্থতা ও লাবণ্য ধরে রাখতে নিয়মিত পরিচর্যার বিকল্প নেই।
করোনার এই সময়ে অনেকেই হয়তো বিউটি স্যালনে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। ভাবছেন কী করে ত্বকের যত্ন নেব। আসলে ঘরে থেকেই ত্বকের যথাযথ যত্ন নেয়া সম্ভব এবং অনেক কম খরচে।
আজকের এই লেখাটি তাদের জন্যই যারা ঘরে বসেই নিজের ত্বককে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে চান।
ক্লেনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিংএই তিনটি হলো ত্বক সুস্থ রাখার সবচেয়ে কার্যকর মৌলিক তিনটি ধাপ। এই তিনটির একটিও বাদ দেয়া যাবে না, যদি আপনি সুস্থ ও চকচকে ত্বক আশা করেন।
ক্লেনজিংত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখা উচিত। আপনার ত্বকের ধরন বুঝে আপনি একটি ভালো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। এখন অনেক হ্যান্ড মেইড সাবান পাওয়া যায়, যেগুলো বাজারের অন্যান্য সাবানের মতো ত্বকের ক্ষতি করে না।
সাবান বা ফেসওয়াশ যেটাই ব্যবহার করবেন, অবশ্যই ত্বকের সঙ্গে মানানসই কি না, তা আগে খেয়াল করা প্রয়োজন।
ময়দা দিয়েও কিন্তু খুব সুন্দর করে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। পরিমাণমতো ময়দা ও পানি দিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে আলতো করে ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেললেও ক্লেনজিং হয়ে যাবে।
কাঁচা দুধ কটন বলে ভিজিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। কাচা দুধ খুব ভালো প্রাকৃতিক ক্লেনজার।
টোনিংএই ধাপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা অনেকেই এটা এড়িয়ে যাই। নিয়মিত টোনার ব্যবহারে ত্বকের সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত তেল বা ব্রণের সমস্যায় টোনার বেশ কার্যকরী।
অনলাইনে কিংবা দোকানে নানা ধরনের টোনার কিনতে পাওয়া যায়। আপনার ত্বক অনুযায়ী টোনার ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন।
আপনার কাছে যদি টোনার নাও থাকে তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। আমাদের রান্নাঘরের কিছু কমন উপাদান দিয়েও টোনারের কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে।
সমপরিমাণ আলুর রস ও পানি একসাথে মিশিয়ে টোনার হিসেবে লাগাতে পারেন। যাদের ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে তাদের জন্য শসার রস খুব ভাল একটি বিকল্প হতে পারে বাজারের কেনা টোনারের। ত্বকের উজ্জ্বলতায় গোলাপ জল খুব কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক টোনার। আপেল সিডার ভিনেগার ও পানির মিশ্রণ ও একটি ভাল টোনার। এক ভাগ ভিনেগারের সাথে দুই ভাগ পানি মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন টোনিং করার জন্য।
টোনার ব্যবহারের নিয়ম মুখ পরিষ্কারের পর । পরিষ্কার ও শুকনো মুখে টোনার লাগাতে হয়। তুলার প্যাড অথবা ছোট কটন বলে একটু টোনার মিশিয়ে পুরো মুখ ও গলায় আলতো ভাবে মুছে নিতে হবে।
ময়েশ্চারাইজিংত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতেই হবে। অনেকের ভুল ধারণা থাকে যে ময়েশ্চারাইজার শুধু শুষ্ক ত্বকের জন্য কিংবা গরমে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর প্রয়োজন নেই। আসলে, সব ঋতুতেই এবং শব ধরণের ত্বকের জন্যই ময়েশ্চারাইজার একটি কার্যকরী স্কিন কেয়ার আইটেম।
ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে, বয়সের ছাপ কমাতে, ব্রণের প্রকোপ রুখতে অথবা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে ময়েশ্চারাইজার খুব উপকারী।
বাজারে ত্বকের ধরণ ভেদে নানা প্রকারের ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। যার ত্বক তৈলাক্ত সে অয়েল ফ্রী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবে আবার যার শুষ্কতার সমস্যা রয়েছে সে অয়েল বেইজড ক্রিম লাগাবে।
সকালে ও রাতে দুইবার ময়েশ্চারাইজিং করাটা ভাল।
অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল, এলোভেরা জেল কিংবা মধু হতে পারে কেনা ময়েশ্চারাইজারের বিকল্প। তবে অবশ্যই ত্বকের ধরণ বুঝে ময়েশ্চারাইজিং করতে হবে এবং ঘরোয়া উপাদানটি যেন খাঁটি হয় তাও লক্ষ্য রাখতে হবে। বাজারের সস্তা নারিকেল তেল দিয়ে ময়েশ্চারাইজিং করলে ভাল ফল আশা করা যাবেনা।
সুন্দর ত্বকের জন্য চাই অতিরিক্ত যত্নত্বকের নিয়মিত পরিচর্যার পাশাপাশি কিছু বাড়তি যত্নও দরকার। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ফেস প্যাক ব্যবহারে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আরও সুন্দর। নানারকম রেডি ফেস প্যাক বাজারে আছে। এ ছাড়াও আপনি চাইলে ঘরে বসেই বানিয়ে নিতে পারেন দারুণ কার্যকরী কিছু প্যাক।
স্বাভাবিক ত্বক ভিটামিন-ই ও কলার ফেইস প্যাকপাকা কলা ও ই- ক্যাপসুলের ভিতরের তেল একসাথে ব্লেন্ড করে মসৃণ পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার এই প্যাকটি আপনার পুরো মুখে অ্যাপ্লাই করুন। ২০-৩০ মিনিট রেখে ভালো করে প্যাকটি ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে এর সাথে চন্দন পাউডার বা গোলাপজলও মিক্স করতে পারেন। এতে ত্বক আরও সুন্দর হবে।
মধু ও কলার ফেইস প্যাকপ্রথমে কলা ছিলে নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। এবার এতে মধু ও অলিভ অয়েল মিক্স করুন। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মেশানো হয়ে গেলে মুখে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ১০-১৫ মিনিট। তারপর নরমাল পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
শুষ্ক ত্বক অলিভ অয়েল ও ডিমের কুসুমের প্যাকঅলিভ অয়েল ও ডিমের কুসুম উচ্চমানের প্রোটিন ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ দুটি উপাদান। একটি পাত্রে অলিভ অয়েল ও একটি ডিমের কুসুম নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে নিন। শুষ্ক ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিটের পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার লাগাতে পারেন।
কলা ও দইয়ের প্যাকপাকা কলা ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে অন্যতম কার্যকরী উপাদান। টক দই ও কলা একসাথে পেস্ত করে মুখে লাগাতে পারেন। সাথে একটু মধু দেয়া যায় যদি আপনার ত্বকে মধু সহনশীল হয়।
তৈলাক্ত ত্বক মুলতানি ফেস প্যাকমুলতানি মাটি ত্বকের পরিচর্যায় ব্যবহৃত একটা প্রাচীন উপাদান। এটা ত্বকের ময়লা এবং অতিরিক্ত তেল দূর করে। ব্রণের সমস্যা দূর করতে মুলতানি মাটি ব্যবহৃত হয়। মুলতানি মাটি ও পানি অথবা শসার রস মিসিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলবেন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন এটি ব্যবহার করুন।
ডিমের সাদা অংশের প্যাকটক দইয়ের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং ভাল ফল পাওয়া যায়। একটা ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক টেবিল চামচ দই মেশান। মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই প্যাক ব্যবহার করুন।
সপ্তাহে একদিন স্ক্রাবিংত্বকের মৃত কোষ দূর করতে স্ক্রাবিং খুব উপকারী। নিয়মিত স্ক্রাবিং করলে ত্বক অনেক মসৃণ ও কোমল হয়। ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায় এর ফলে।
ঘরে থাকা উপাদান দিয়েই স্ক্রাবিং করা যেতে পারে। এ ছাড়াও বাজারে অনেক ধরণের স্ক্রাব আছে।
চালের গুঁড়া খুব ভাল একটি স্ক্রাব। স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বক হলে চালের গুঁড়ার সাথে দুধ এবং মধু মিশিয়ে মুখে কিছুক্ষণ হালকা ভাবে ঘষে নিলেই হল। জাদের তক তেলতেলে তারা দুধের বদলে শসার রস কিংবা মাল্টার রস অথবা লেবুর রস ও পানির মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারে।
স্ক্রাবিং উপকারী কিন্তু প্রয়োজনের অধিক করলে ত্বকের ক্ষতি করে। তাছাড়া বেশি জোরে ম্যাসাজ করাও ঠিক না।