চীনের উহানে গত বছরের ডিসেম্বরে সংক্রমণ শুরু হয় করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯)। এর কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। ১১ মার্চ একে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এরপর থেকে করোনা চিকিৎসায় ব্যাপক মনোযোগ দেওয়া শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
করোনা রোগীদের প্রতি বাড়তি এ নজর কাল হয় অন্য অনেক রোগে আক্রান্তদের জন্য। মহামারী মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক দেশই অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় কম নজর দেওয়া শুরু করে।
ডব্লিউএইচওর সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। সংস্থাটি চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ১৫৯টি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করে। এর মধ্যে ১০৫টি দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সাড়া পায় তারা।
ডব্লিউএইচওর জরিপে দেখা যায়, করোনার প্রভাবে ক্যান্সার, এইডস, যক্ষ্মার মতো মারাত্মক রোগের চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চঝুঁকিতে আছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলো।
জরিপ অনুযায়ী, করোনার সময়ে নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে আউটরিচ সার্ভিসের ৭০ শতাংশ ও ফ্যাসিলিটি-বেইজড সার্ভিসের ৬১ শতাংশ ব্যাহত হয়।
করোনার কারণে ছোঁয়াচে নয় এমন রোগ পরীক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে ৬৯ শতাংশ। এ ছাড়া ৮৬ শতাংশ ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটেছে পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিরোধ কার্যক্রমে। অন্যদিকে মানসিক রোগের চিকিৎসা এবং ক্যান্সার পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটেছে ৬১ ও ৫৫ শতাংশ।
উল্লিখিত পরিসংখ্যানগুলো ডব্লিউএইচওর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ জরিপে অংশ নেয়া প্রায় ৯০ শতাংশ দেশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ফল পেয়েছে তারা।
এ বিষয়ে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেডরোস আধানম বলেন, 'এ জরিপ আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ভঙ্গুরতার ওপর আলোকপাত করেছে। পাশাপাশি এটি মহামারী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত করার নতুন কিছু কৌশল গ্রহণের কথাও বলেছে।'
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ থেকে সব দেশের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, স্বাস্থ্য কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়।যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। একই সঙ্গে এমন স্বাস্থ্যসেবা গড়ায় বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবার পূর্ণ সুযোগ থাকে।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মোকাবিলার অংশ হিসেবে সরকারি নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় করে কিছু খাতে স্বাস্থ্যসেবা (যেমন: দাঁতের চিকিৎসা) পরিকল্পিতভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনেক সেবা বন্ধ থাকায় জনগণের ওপর স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।