বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে জীবনযুদ্ধে জয়ী সাবিনা 

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২৩ ১৩:৪৫

নওগাঁ সদর উপজেলার ইউএনও মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘সাবিনা ইয়াসমিন জীবনের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে বর্তমানে অদম্য একজন নারী হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন এই সমাজে। তিনি নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রতিকূলতাকে জয় করে স্বাবলম্বী নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।’

নওগাঁর সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়নের আবাদপুর পূর্বপাড়া গ্রামের সাবিনা ইয়াসমিন তার জীবনের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে বর্তমানে তিনি একজন সফল নারী। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন ও বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করে তিনি তার ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। সন্তানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলাই এখন তার স্বপ্ন।

ইতোমধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন ২০২২ সালে ‘জয়িতা অন্বেষণ বাংলাদেশ কার্যক্রমের আওতায়’ উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন জয়ীতা সবংর্ধনা।

১২ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন দুই সন্তানের মা ৩৫ বছর বয়সী সাবিনা ইয়াসমিন। ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় তার টিকে থাকার সংগ্রাম। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন ও বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে তার জীবনযুদ্ধের চাকা। তিনি এখন স্বাবলম্বী। তার সাফল্য দেখে স্থানীয়রাও খুশি।

সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার স্বামী যখন মারা যায় তখন আমার ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত আর মেয়ের বয়স ছিল পাঁচ মাস। স্বামীর চিকিৎসা বাবদ রেখে যাওয়া প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ। স্বামীর মৃত্যুর পর খুব অভাব-অনটন ছিল সংসারে। কীভাবে সংসার চালাবো এবং ছেলে-মেয়েদের মানুষ করবো এই নিয়ে খুব চিন্তা হত। কি করবো, না করবো কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। সেই সময় পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি। বরং অনেকে বলত এত কম বয়সে স্বামীর মৃত্যুর হয়েছে, হয়তো কোথাও চলে যাবো।

‘এত টাকা ঋণ ছিল যে, কেউ নতুন করে আর টাকা ধার দিতে চাইতো না। পরবর্তী সময়ে মন থেকে সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে, ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, জীবনের চরম সত্যটাকে মেনে নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া একটি সোনার চেইন বিক্রি করে দুটি গরু পালন শুরু করি। তিন মাস পর দুটি গরু থেকে প্রায় ১৬ হাজার টাকা লাভ হয়। পরে আরও তিনটি গরু পালনের পাশাপাশি হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন রকম সবজির চাষ শুরু করি । হাঁস-মুরগির ডিম ও সবজি বিক্রি করে সংসার চলতো। এভাবেই আস্তে আস্তে সংসারে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে।’

সাবিনা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘প্রথমে স্বামীর চিকিৎসা বাবদ বাইরে থেকে ঋণ নেয়া দুই লাখ টাকা পরিশোধ করি। এরপর আস্তে আস্তে আমার স্বামীর তিন বিঘা জমি চিকিৎসার জন্য বন্ধক রাখা হয়েছিল, সেসব জমি ফেরত নিয়েছি। বর্তমানে আরও ৪ বিঘা জমি নিজে বন্ধক নিয়েছি। সংসার চালানো থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ সব খরচ বাবদ বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় হয়। বলতে গেলে আমি একা একাই স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন এলাকার মানুষও সহযোগিতা করে।’

জীবনযুদ্ধে জয়ী এই নারী বলেন, ‘আমার আশা-ভরসা ও নিঃসঙ্গ জীবনে দুই ছেলে-মেয়েই ছিল সব। নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে এবং কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয়, সেজন্য পরিশ্রম করে এখন এ পর্যায়ে এসেছি। বর্তমানে ছেলে নওগাঁ সরকারি কলেজে ও মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা শেষ করে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভালো কোনো সরকারি চাকরি করবে এমনটাই প্রত্যাশা।’

স্থানীয় বাসিন্দা সহিদা বেগম বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করেছেন সাবিনা। অনেক কষ্ট করে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি চাষ করতেন। এসব করেই স্বামীর বন্ধক রাখা জমি ফেরত নিয়েছেন। আবার অন্যের জমিও বন্ধক নিয়েছেন। এখন স্বাবলম্বী হয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভালোভাবে চলছে তার সংসার।’

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, ‘আমার চাচা মারা যাওয়ার পর চাচি দুইটা ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছে। এরপর তিনি তার পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এই জায়গায় এসেছেন।’

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘সাবিনা ইয়াসমিন জীবনের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে বর্তমানে অদম্য একজন নারী হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন এই সমাজে। তিনি নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রতিকূলতাকে জয় করে স্বাবলম্বী নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে সাবিনা ইয়াসমিনকে ‘অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী’ ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে জয়ীতা সবংর্ধনাও দেয়া হয়েছে। তার যদি কোনোরকম সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন হয় আমাদেরকে জানালে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর