পর্যাপ্ত আইন থাকা সত্ত্বেও দেশে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু আইনের ওপর নির্ভর করাই নয়, নারীদের তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করাটাও জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ফাউন্ডেশন ফর ল এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফ্ল্যাড) ও বাংলা ট্রিবিউনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। নারীদের অধিকার ও প্রাসঙ্গিক আইন (স্বাধীনতাত্তোর ৫১ বছরের মূল্যায়ন) শিরোনামে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাইমা হক বলেন, ‘পারিবারিক আদালতের বিচারকদের কাউন্সেলিং প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন রয়েছে। কোনো দম্পতি যখন তালাকের আবেদন করেন, তখন তাদের সন্তান থাকলে তাকে কার জিম্মায় দেয়া উচিত, সামাজিক ও মানসিক পরিস্থিতি কী এগুলো বোঝার জন্য বিচারকদের এ ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। একইসঙ্গে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিচারের ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে নারীরা বেশি ভুক্তভোগী হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারী অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হলে শিক্ষার বিষয়ে জোর দিতে হবে। তবে সেটি যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হতে হবে তা কিন্তু না। এছাড়াও এক্সেস টু জাস্টিস নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক সক্ষমতা থাকলে বিচারিক সিস্টেমে আমরা প্রবেশ করতে পারবো। তবে সবকিছুর মূলে আমাদের সচেতন হতে হবে। পত্র-পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমরা অনেক আইন পেয়েছি। মানবপাচার, পারিবারিক সহিংসতা নিরোধসহ প্রভৃতি বিষয়ে অনেক আইন এসেছে। আইনের আওতায় এসেও আমাদের নারী অধিকারের বিষয়ে যতটুকু অর্জন হওয়ার কথা ছিল তা কিন্তু আমরা পাইনি। দেখতে পাচ্ছি সচেতনতার অভাবে অনেকাংশে আমাদের নারীদের অর্জনের জায়গাটিও দিন দিন কর্তন করা হচ্ছে।
‘যৌন হয়রানি রোধে একটি গাইডলাইন ছিল যা আইনে রূপান্তর করা হয়নি। এভাবে অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে আমাদের কাজ করার রয়েছে। তাহলেই হয়তো আমরা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব করতে পারবো।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আইন রয়েছে ঠিক। কিন্তু আমরা আমাদের বাবা-ভাই-ছেলেদের থেকেই উপযুক্ত সম্মান পাই না। তাই নারীর প্রতি বৈষম্য হয়তো পুরোপুরি দূর করতে পারবো না। কিন্তু কমিয়ে আনতে পারবো। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাই আসুন ঘর থেকেই এই সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করি।’
বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে কাজ করার সময় আমরা নির্যাতিত নারীদের দেখতে পাই। আইন আছে বাস্তবায়ন নেই, এ কথাটা সবসময় শুনতে পাই। আমার মনে হয়, এসব বিষয়ে আমাদের করণীয়, সম্ভবপর কাজগুলো কী সে বিষয়ে একসঙ্গে বসে সব ঠিক করা। সেক্ষেত্রে ফ্ল্যাডের সঙ্গে গণমাধ্যমের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছি।’
ফ্লাডের পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলমের সঞ্চালনা ও ফ্লাডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মলয় সাহা। এ সময় অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।