বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ট্রান্সজেন্ডার অঙ্কিতায় ঢাবির নতুন ইতিহাস

  •    
  • ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ২০:২৭

প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএতে ভর্তি হয়েছেন অঙ্কিতা ইসলাম। তার অধ্যয়নের পথ মসৃণ করতে পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের বাণিজ্যিক এই প্রোগ্রাম শেষ করতে অঙ্কিতার অর্থ ব্যয় হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএতে ভর্তি হয়েছেন ট্রান্সজেন্ডার নারী অঙ্কিতা ইসলাম। অঙ্কিতাই প্রথম ট্রান্সজেন্ডার যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষায়িত এই প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

অঙ্কিতার অধ্যয়নের পথ মসৃণ করে দিতে তার পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের বাণিজ্যিক এই প্রোগ্রাম শেষ করতে তাকে কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অদম্য ইচ্ছা পূরণের পথটি সহজ ছিল না অঙ্কিতার। দৃঢ় লড়াইয়ে তার পাশে ছায়ার মতো থেকেছেন ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট হোচিমিন ইসলাম।

অঙ্কিতার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নান্দুরিয়ায়। করোটিয়ায় সরকারি সা’দত কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক করেছেন।

অঙ্কিতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল আমার। তবে ইন্টার পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ভয় পেয়েছি। এত বড় পরিবেশে মানুষের সঙ্গে মেশা, বাড়ি ছেড়ে থাকার ভয়। এছাড়া আর্থিক সমস্যার কারণেও তখন পড়ার চিন্তা বাদ দিতে হয়েছে।

‘এরপর স্নাতক শেষে ব্র্যাকে চাকরি হওয়ার পর ভাবলাম যেহেতু আমি এইচআরএ চাকরি করছি এই রিলেটেড একটা বিষয়ে মাস্টার্স করি। এরই মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএতে ভর্তির সার্কুলার হয়। তখন অ্যাপ্লাই করার আগেও নিজের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। চান্স পেলেও নেবে কিনা- তা নিয়ে অনেক ভেবেছি।’

অঙ্কিতা বলেন, ‘পরীক্ষায় ১৮৩তম মেধা তালিকায় আসি। এরপর সাক্ষাৎকারে ডাকা হলো, সাবজেক্ট চয়েস দিতে হলো। তখন ম্যানেজমেন্ট চয়েস দিলাম, সেটা পেলামও। তবে যখন খরচের বিষয়টি নিয়ে বসলাম দেখলাম অনেক টাকা লাগবে, যেটা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।

‘এদিকে ভর্তির তারিখ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই কিছু টাকা ধার করে ভর্তি ফিটা দিই। ভর্তি হওয়ার পর কোর্স ফি দেয়ার তারিখ এগিয়ে আসে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আমি হোচিমিন আপুকে বিষয়টি জানাই। আপু অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। পরে দুজনে মিলে গত ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম।

‘স্যার আমার জেন্ডার, আমার অর্থনৈতিক অবস্থাসহ বিস্তারিত শুনে সব মিলিয়ে আমার জন্য কোর্স ফি ফ্রি করে দেয়ার ব্যবস্থা নিলেন, সেটা প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। তিনি ডিন স্যারকে ডেকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বললেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অঙ্কিতা বলেন, ‘‘স্যার বললেন, ‘আমি একজন ট্রান্সজেন্ডারকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগটা দিতে পারি এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও গর্বের।’’

ট্রান্সজেন্ডার নারী অঙ্কিতা ইসলাম ও হোচিমিন ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

অঙ্কিতার অভিযাত্রায় সঙ্গী হতে পেরে হোচিমিন ইসলামও উচ্ছ্বসিত। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অঙ্কিতা অনেক দিন ধরে বলছিল, একটা মাস্টার্স করতে চায়। ঢাবিতে এমবিএর জন্য পরীক্ষা দিল, চান্স পেল, কিন্তু এই প্রফেশনার কোর্সে এত ব্যয় ওর পক্ষে বহন করা কঠিন। আমাকে বিষয়টি জানালে প্রথমে স্টুডেন্ট লোন নেয়া যায় কিনা সেটি ভেবেছি। তবে একজন ট্রান্সজেন্ডার নারীর জন্য সেটি হয়তো অনেক কঠিন প্রক্রিয়া।

‘পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারকে ফোন করে দেখা করার সময় চাইলাম। তিনি আমাদের যেতে বললেন। অফিসে ভিসি স্যার সব কিছু শুনে ডিন স্যারকে ডেকে পাঠালেন। তাকে বললেন একজন ট্রান্সজেন্ডারকে পড়ার সুযোগ দিতে পারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও গর্বের। পরে ডিন স্যার নিজেই তার গাড়িতে করে আমাদের ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলেন। শুধুটা একটা অ্যাপ্লিকেশন করালেন। পুরো ব্যাপারটা আসলে এভাবেই হয়েছে।’

অঙ্কিতার মতো ট্রান্সজেন্ডারদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব বলেই মনে করছেন ঢাবি উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিষয় কিন্তু বিশেষভাবে আমলে নিয়েছেন- বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডাররা সমাজে নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত ছিল, নিগৃহীত ছিল। তিনি এসডিজি করতে গিয়ে, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের জন্য, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত প্রান্তিক মানুষের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছেন।

‘আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই এটি একটি দায়িত্ব। মানবিক দায়িত্ব তো আছেই। আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হলে সব ক্ষেত্রেই সব মানুষকেই অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দিতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডার নারী অঙ্কিতা ইসলাম ও হোচিমিন ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘অঙ্কিতা এতদূর পর্যন্ত এসেছে, নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। আমরা হয়তো তাকে কিছুটা সাহায্য করেছি, কিন্তু এটির বড় গুরুত্ব আছে। আমার লক্ষ্য হলো এর মাধ্যমে উদাহরণ হবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা স্টেক হোল্ডার আছেন এটি দেখে অনুপ্রাণিত হবেন। আমরা চাই সমাজের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিটি যেন বদলায়।’

এ বিভাগের আরো খবর