বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইরানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতা দাবির ১০০ দিন

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:০৬

হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি (এইচআরএএনএ) অনুসারে, ৬৯ শিশুসহ ৫০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার দুই জনকে ইতোমধ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। কমপক্ষে ২৬ জন এখন একই পরিণতির মুখে আছেন।

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ইরানে চলা বিক্ষোভ ১০০তম দিনে গড়াল। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভটি ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ইরানের শাসকদের সামনে। যদিও বিক্ষোভের জন্য চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ইরানিদের।

হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি (এইচআরএএনএ) অনুসারে, ৬৯ শিশুসহ ৫০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার দুই জনকে ইতোমধ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। কমপক্ষে ২৬ জন এখন একই পরিণতির মুখে আছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই বিচারকে ‘শেইম ট্রায়াল’ বলে অভিহিত করেছে।

দেশজুড়ে বিক্ষোভ কয়েক বছর আগেও দেখেছে ইরান। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া বিক্ষোভটি ২০১৮ পর্যন্ত চলেছিল। এরপর ২০১৯ সালের নভেম্বরে আরেকবার বিক্ষোভের মুখে পড়ে ইরান। তবে এবারের বিক্ষোভটি একবারেই অন্যরকম।

এতে সমাজের সবস্তরের মানুষ শামিল হচ্ছেন। ইরানের মতো কট্টর ইসলামিক শাসনের দেশে বিক্ষোভটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’- স্লোগানে তারা রাজপথ কাঁপিয়ে দিচ্ছেন।

বিক্ষোভে ইরানি সেলিব্রেটিরাও যুক্ত হচ্ছেন। এতে সরকারের রোষানলেও পড়ছেন তারা। অনেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন আবার অনেকে নির্বাসিত হচ্ছেন।

ইরানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি। এক তরুণ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর সরকারের নিন্দা করেছিলেন তিনি। এর আগে বাধ্যতামূলক হেডস্কার্ফ ছাড়া নিজের একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন এই অভিনেত্রী। তারানেহ এখন ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে বন্দী আছেন।

তারানেহ অভিনীত ‘দ্য সেলসম্যান’ সিনেমাটি অস্কার জেতে। সিনেমাটির পরিচালক আসগর ফারহাদি ইনস্টাগ্রামে লেখেন, ‘আমি তারানেহের সঙ্গে চারটি সিনেমায় কাজ করেছি। দেশবাসীর ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য এখন তিনি কারাগারে আছেন।

‘যদি এই ধরনের সমর্থন দেখানো অপরাধ হয়, তাহলে এই দেশের কোটি কোটি মানুষ অপরাধী।’

‘মৃত্যুর হুমকি’

পেগাহ আহাঙ্গারানিও ইরানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। গ্রেপ্তারের ভয়ে দেশ ছেড়েছেন তিনি। বিবিসি ফার্সিকে পেগাহ বলেন, ‘দুই পক্ষই উগ্রপন্থী। শাসকরা ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছেন। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।

‘ইরান মাহসা আমিনি যুগে ফিরে যেতে পারে না।’

ইরানে চলমান বিক্ষোভের শুরু ১৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছরের এক তরুণীর মৃত্যু হয়। কুর্দি এই তরুণীর নাম মাহসা আমিনি। হিজাব ঠিক মতো না করার অভিযোগে রাজধানী তেহরান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

মাহসার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশি নির্যাতনে মাহসা মারা গেছেন। তবে সরকার বলছে, পুরনো শারীরিক অসুস্থতায় মৃত্যু হয়েছে তার। সেদিন সন্ধ্যা থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে ইরানে।

‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ স্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে দিচ্ছেন নারীরা

আরেক সুপরিচিত ইরানি অভিনেতা হামিদ ফাররোখনেজাদ চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনিকে একনায়ক ফ্রাঙ্কো, স্ট্যালিন এবং মুসোলিনির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তিনি।

ইরানের বিখ্যাত সাবেক ফুটবলার আলি করিমি দুবাইয়ে থাকেন। তিনিও বিক্ষোভকে সমর্থন করেছিলেন।

করিমি বলেন, ‘ইরানি গোয়েন্দারা আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসি।’

করিমি এখন তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ইরানের শাসকদের সবচেয়ে স্পষ্টবাদী সমালোচকদের একজন। ইনস্টাগ্রামে তার ১৪ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে।

আরেক ইরানি ফুটবল আইকন আলি দাই। বিক্ষোভে সমর্থন দেয়ায় ইরানের বিচার বিভাগ তার গহনার দোকান এবং রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে।

পাগড়ি খুলে ফেলা

ইরানের ‘জেনারেশন জেড’ কঠোর ধর্মীয় শাসনকে অস্বীকার করে। মাথার স্কার্ফ পুড়িয়ে তারা সামনে থেকে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তরুণ বিক্ষোভকারীদের আরেকটি প্রবণতা ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা শিয়া মুসলিম ধর্মগুরুদের পেছনে লুকিয়ে থাকে। সুযোগবুঝে একপর্যায়ে তারা ধর্মগুরুদের পাগড়ি ফেলে পালিয়ে যায়।

A schoolgirl without a headscarf in Tehran knocks off a cleric’s turban & runs away. “#TurbanTossing is a campaign to protest against the symbol of access to the ruling system, privilege, corruption and oppression. #MahsaAmini #مهسا_امینی #عمامه_پرانی pic.twitter.com/rdwrTXQ2Nr

— Omid Memarian (@Omid_M) November 13, 2022

এই অপরাধে গত মাসে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজ থেকে ১৬ বছরের এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মুক্তি পাওয়ার আগে ১০ দিন আরশিয়াকে আটক করা হয়। এর দুই দিন পর ছেলেটি আত্মহত্যা করে। আরশিয়ার পরিবারের অভিযোগ, আটকের সময় তাকে পেটানো হয়েছিল। তারপর আটক অবস্থায় তাকে ‘অজানা ওষুধ’ খাওয়ানো হতো। এসবের প্রভাবে আরশিয়া আত্মহত্যা করেছে।

ইরানি কর্তৃপক্ষ কেবল প্রতিবাদকারীদের ওপরই দমন-পীড়ন করেনি। যারা হেফাজতে মারা গেছে বা নিহতদের মরদেহ বুঝিয়ে তাদের চুপ থাকার জন্য শাসায় বলে অভিযোগ আছে ঢের।

এ ধরনের চাপের ভয়ে নিহত এক বিক্ষোভকারীর ভাই মর্গ থেকে লাশ চুরি করে পালিয়ে যায় বলে একটি সূত্র বিবিসি ফার্সিকে জানিয়েছে।

কাতার বিশ্বকাপ থেকে ইরানের বিদায়ের পর গাড়ির হর্ন বাজিয়ে তা উদযাপন করছিলেন মেহরান সামাক। জাতীয় দলের ফুটবলাররা বিশ্বকাপে বিক্ষোভ নিয়ে কিছু না বলায়, তাদের ওপর ক্ষেপে ছিল ইরানিরা। সেদিন পুলিশ মেহরানের মাথায় সরাসরি গুলি করে তাকে হত্যা করে।

অন্য একটি পরিবার বলছে, তারা তাদের ২৩ বছর বয়সী ছেলে হামেদ সালাহশুরের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন পেয়েছিলেন। হামেদ পুলিশের হেফাজতে মারা গিয়েছিলেন।

‘মৃত্যুদণ্ড এবং নির্যাতন’

এ পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই বিচারের চরম নিন্দা করেছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অনেকেই আবার বলেছেন, জেলে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা-কুর্দিস্তান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কুর্দি-ইরানি র‌্যাপার সামান ইয়াসিন মঙ্গলবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সংগঠনটি এর আগে বলেছিল, ইয়াসিনকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। ইরানের সুপ্রিম কোর্ট শনিবার তার মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল বহাল রেখেছে।

বিবিসি ফার্সির কাছে আসা একটি অডিও ফাইলে ২৬ বছর বয়সী অপেশাদার বডি বিল্ডার সাহান্দ নূরমোহাম্মাদজাদেহ অভিযোগ করেন, তাকে কারাগারে বেশ কয়েকবার ‘প্রতীকী মৃত্যুদণ্ড’ দেয়া হয়েছিল।

নুরমোহাম্মাদজাদেহ

নুরমোহাম্মাদজাদেহকে নভেম্বরে ‘ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতা’-র (ইরানের আইনে অস্ত্র হাতে জনসাধারণের নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা) অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। ২৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের রাস্তায় বিক্ষোভের কারণে যান চলাচলে বাধা দেয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

বিবিসি ফার্সি এক সাবেক বন্দীর এক্সরে ছবি হাতে পেয়েছে। যেখানে হামিদ ঘরে-হাসানলু নামে এক রেডিওলজিস্টের তিনটি পাঁজর ভেঙে গেছে দেখা যায়; তার ফুসফুসেও ছিদ্র ধরা পরে।

হামিদ ‘পৃথিবীতে দুর্নীতি’-এর জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। এটি এমন একটি অপরাধ যার সাজা মৃত্যুদণ্ড।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য হামিদকে নির্যাতন করা হয়েছিল।

এ বিভাগের আরো খবর