আফগানিস্তানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মারিয়াম (ছদ্মনাম)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কোর্সের অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করার সময় বাগদত্তা তাকে ফোন করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে তালেবান।
কান্না চেপে রেখে ২৩ বছর বয়সী এই ছাত্রী আল জাজিরাকে বলেন, “সে (বাগদত্তা) আমাকে বলল, ‘আমার খুব খারাপ লাগছে, তুমি ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে পারছ না; তোমার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার বন্ধ হয়ে গেছে।’ কথাগুলো শোনার পর থেকে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।”
আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী নেদা মোহাম্মদ নাদিম স্বাক্ষরিত চিঠি মঙ্গলবার দেশটির সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের প্রবেশাধিকার জরুরি ভিত্তিতে স্থগিতের নির্দেশ দেয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের এ সিদ্ধান্তে হৃদয় ভেঙে যায় মারিয়ামের মতো অনেক ছাত্রীর।
বেশ কয়েকজন ছাত্রী আল জাজিরাকে জানান, ক্যাম্পাসে তাদের প্রবেশ ঠেকাতে বুধবার সকালে তালেবান গাড়ি দিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণ জানায়নি তালেবান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী নেদা মোহাম্মদ নাদিম।
অক্টোবরে আফগানিস্তানের নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পর এ নিষেধাজ্ঞা আসে।
গত বছর তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে হাই স্কুলে মেয়েদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করেছে।
এমন বাস্তবতায় মারিয়াম বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্নাতকের শেষ সেমিস্টারে রয়েছি। এ পরিস্থিতিতে আমাকে মাস্টার্সে স্কলারশিপের জন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবন্ধ পাঠাতে হবে, কিন্তু আমার হাত-পা অসাড় হয়ে গেছে। কথাগুলো লিখতে পারছি না।
‘আমি কাঁদতে চাই, কিন্তু কাঁদতে পারছি না। মনে আশা ও স্বপ্ন থাকায় আমাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।’
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ২২ বছর বয়সী ছাত্রী সাহার (ছদ্মনাম) বলেন, ‘খবরটি শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। যে মনঃকষ্ট পেয়েছি, তা বর্ণনা করার জন্য আমার কাছে কোনো শব্দ নেই। পড়াশোনা করতে না পারলে আমার জীবন অর্থহীন।’