ইরানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী সারা হোসেন।
তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই মিশন ইরানে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে চলমান বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করবে। মিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন পাকিস্তানের শাহীন সরদার আলী এবং আর্জেন্টিনার ভিভিয়ানা ক্রিস্টিসেভিচ।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংস্থার প্রেসিডেন্ট ফেডরিকো ভিলেগাস এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তিন সদস্যকে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। এই মিশন ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষত নারী ও শিশুবিষয়ক অধিকার হরণের অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইরানে সম্প্রতি নারী অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছে তাতে আন্দোলনকারীদের মানবাধিকার কীভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে তা তদন্ত করবে এই মিশন। মিশন জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের পক্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করবে।
মিশনের তিন সদস্যকে বেছে নিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাছে যোগ্য এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের বিষয়ে সুপারিশ আহ্বান করেন। আর সেখান থেকেই সারা হোসেন, শাহীন সরদার আলী ও ভিভিয়ানা ক্রিস্টিসেভিচকে নির্বাচন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই মিশনকে আগামী বছরের জুনে মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৩তম অধিবেশনে একটি একটি মৌখিক অগ্রগতির তথ্য উপস্থাপনের অনুরোধ করা হয়েছে। এরপর ২০২৪ সালের মার্চে অনুষ্ঠেয় ৫৫তম একটি সমন্বিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর পরই ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্ষোভ ও সহিংসতায় ৪৭৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৬৮। তবে ইরান সরকারের দাবি অনুযায়ী, অব্যাহত বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর ৬১ সদস্যসহ নিহতের সংখ্যা ২৫১। বিক্ষোভে অংশ নেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫ হাজারের বেশি নারী-পুরুষ।
সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ডও দিয়েছে ইরানের আদালত। ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে দুজনের ফাঁসি।