বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অন্য বর্ণে বিয়ের খেসারত জীবন দিয়ে

  •    
  • ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ১৯:২৯

প্লাস্টিকে মোড়ানো আয়ুশির দেহটি একটি লাল স্যুটকেসে বন্দি অবস্থায় শুক্রবার উত্তর ভারতের মথুরা শহরের কাছে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আয়ুশির বাবা নীতেশ কুমার যাদব এবং মা ব্রজবালাকে। পুলিশের ধারণা, অনার-কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন মেয়েটি।   

আয়ুশি চৌধুরীর ২২তম জন্মদিন আগামী ১ ডিসেম্বর। দিনটা আর উদযাপন করা হবে না তার। কারণ ৯ দিন আগে পুলিশের সামনেই আয়ুশির মরদেহ দাহ করা হয়েছে।

প্লাস্টিকে মোড়ানো আয়ুশির দেহটি একটি লাল স্যুটকেসে বন্দি অবস্থায় শুক্রবার উত্তর ভারতের মথুরা শহরের কাছে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আয়ুশির বাবা নীতেশ কুমার যাদব এবং মা ব্রজবালাকে। পুলিশের ধারণা, অনার-কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন মেয়েটি।

সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বা অনার-কিলিং হলো কাউকে নিজের পরিবার বা গোত্রের সম্মানহানির দায়ে ওই পরিবার বা গোত্রের অপর ব্যক্তি কর্তৃক হত্যা করা। এর মাধ্যমে এই সম্মানহানির উপযুক্ত প্রতিকার হয় বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনার কিলিং সংঘটিত হলেও, ভারতে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এই অনার কিলিংয়ের প্রধান শিকার নারীরা।

পুলিশের অভিযোগ, রাজধানী দিল্লির কাছে নিজ বাড়িতে ১৭ নভেম্বর বাবার গুলিতে নিহত হন আয়ুশি। অন্য জাতের এক পুরুষকে বিয়ে করা নিয়ে সেদিন পরিবারের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছিল আয়ুশির। খুনের পর তার বাবা-মা মরদেহ যমুনা এক্সপ্রেসওয়ের কাছে ফেলে এসেছিলেন।

দম্পতি এখন পুলিশ হেফাজতে। তবে তারা এখন পর্যন্ত কিছু শিকার করেননি। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড গোটা ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার লাখ লাখ অভিযোগ জমা পড়ে।

ঘরের তাকে সুন্দর করে সাজানো আয়ুশির বইগুলো

বিবিসি হিন্দি যখন দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির বদরপুরে আয়ুশির বাড়িতে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবে ব্যস্ত পাড়াটি হতাশায় আচ্ছন্ন ছিল। এক প্রতিবেশী জানান, আয়ুশির কী হয়েছে শুনে দুদিন ধরে তিনি ঠিকমতো খাননি।

‘সে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল, হাই স্কুলের পরীক্ষায় অনেক ভালো নম্বর পেয়েছিল’... তিনি স্মরণ করেন।

আয়ুশি একটি বেসরকারি কলেজ থেকে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে স্নাতক করছিলেন। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।

বাড়ির প্রথম তলায় ছিল আয়ুশি ঘর। এখানে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ছাপ পাওয়া যায়। প্রতিটি আসবাবে ছড়িয়ে আছে আয়ুশির দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট আনন্দ... জাগতিকতা।

এই লাল স্যুটকেসটিতে পাওয়া যায় আয়ুশির মরদেহ

এখনও আয়ুশির বইগুলো তার পড়ার টেবিলের তাকে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে। দেয়ালে ঝুলছে বাবা-মা, ছোট ভাই আর দাদির সঙ্গে আয়ুশির হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি।

ছোট্ট আলমারিটাতে থাকা নেইলপলিশ, লিপস্টিকসহ সাজসজ্জার জিনিসগুলো আর ব্যবহার করা হবে না আয়ুশির। তার বিছানার কাছে ঝুলে থাকা ডোরেমন পুতুলটি যেন এখনও খুঁজছে আয়ুশিকে।

আয়ুশির দাদি জামবন্তি জানান, শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল আয়ুশি। বেশির ভাগ সময় তার ঘরে পড়াশোনায় মগ্ন থাকত তার নাতনি।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জামবন্তি বলেন, ‘গত ১৫ হাসপাতালে ছিলাম। যখন আমি ফিরে আসি, তখন পুলিশ এসে আমার ছেলে ও পুত্রবধূকে ধরে নিয়ে যায়।’

আয়ুশির ঘরের দেয়ালে ঝুলছে তার খেলনাগুলো

পুলিশের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, আয়ুশি গত বছর তার বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য বর্ণের এক পুরুষকে বিয়ে করেছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বিবিসি হিন্দিকে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আয়ুশির সঙ্গে তার বাবা-মায়ের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে প্রায়শই ঝগড়া হতো।’

পরিবারের দাবি, খুনের দিন আয়ুশি বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর তার বাবা ভীষণ খেপে যান।

ময়নাতদন্তে আয়ুশির মাথা, মুখ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিশ জানায়, বুকে দুবার গুলি করা হয়েছে আয়ুশিকে। এতেই তার মৃত্যু হয়।

এ বিভাগের আরো খবর