শিশুসন্তানদের বাড়িতে রেখে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী হতে পারছেন না নারী শিক্ষকরা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখায় প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র (ডে কেয়ার সেন্টার)।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসে ডে কেয়ার সেন্টারটি উদ্বোধন করেন কলেজ অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলেজ উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মৃণাল কান্তি গোস্বামী, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মঈন উদ্দিন, সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জিতেন্দ্রনাথ তরফদার, সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাত বিনতে মামুনসহ অন্য শিক্ষকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসে ডে কেয়ার সেন্টারটি উদ্বোধন করেন কলেজ অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান। ছবি: নিউজবাংলা
বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ক্লাস শেষ করে ডে কেয়ার সেন্টারে প্রবেশ করছেন। কেউ তার বাচ্চাকে নিয়ে খেলছেন, কেউবা খাবার খাওয়ানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক নাসরিন আক্তার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ডে কেয়ার সেন্টার চালুর পরে স্বস্তিতে আছি। আমার ছোট বাচ্চাকে বাসায় রেখে এসে নিশ্চিন্তে ক্লাস নিতে পারতাম না। সারাক্ষণ মন পড়ে থাকত বাড়িতে। এখন এই ডে কেয়ারে সন্তানকে একজনের তত্ত্বাবধানে রেখে পুরো মনোযোগ দিয়ে ক্লাস নিতে পারছি। ক্লাস শেষে বাচ্চার সঙ্গে খেলতে পারছি। খুবই ভালো লাগছে।’
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক হাসনা হেনা লিজা বলেন, ‘যুগোপযোগী একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা যারা কর্মজীবী মা রয়েছি, আমাদের সবার চিন্তা আমাদের বাচ্চা চোখের আড়ালে রয়েছে। সেখানে সে ঠিকমতো খাবার খাচ্ছে কি না। তার কোনো কষ্ট হচ্ছে কি না। এসব চিন্তা যেন পিছু ছাড়ে না। বিশেষ করে পরীক্ষার সময়গুলো কঠিন হয়ে ওঠে। তাই ডে কেয়ার সেন্টার চালু করা অসাধারণ একটি উদ্যোগ। সত্যি বলতে এখন নিজের মেয়ে নিজের কাছেই বড় হচ্ছে। এটা অনেক আনন্দের।’
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামিমা আক্তার বলেন, শিশুরা মা থেকে দূরে থাকলে মনবৈকল্য তৈরি হয়। তাই কর্মক্ষেত্রে ডে কেয়ার সেন্টার থাকলে শিশুরা মায়ের সান্নিধ্য পায়। এতে শিশুদের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ ঘটে।
কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, ‘দেশের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডে কেয়ার সেন্টার আছে কি না, আমার জানা নাই। আমরা কলেজ অধ্যক্ষ মহোদয়ের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করি। স্যার বিষয়টা বুঝে সম্মতি দেন। এখন আমাদের কলেজের যেসব নারী শিক্ষক রয়েছেন তারা স্বস্তিতে আছেন। নিঃসন্দেহে এই ডে কেয়ার সেন্টারটি কলেজের পাঠদানে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’
কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু জাফর খান বলেন, ‘বাড়িতে শিশু রেখে কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ দেয়া যায় না। তাই কলেজ ফান্ড থেকে নেয়া অর্থ দিয়ে একটি ডে কেয়ার সেন্টার করেছি।
‘এখানে পরীক্ষার সময় বিভিন্ন শিক্ষার্থীরাও তাদের শিশুসন্তান নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসে। শিশুকে হলের বাইরে রেখে পরীক্ষা দেয়া অনেক কষ্টের। তাই আমাদের চিন্তা আছে এই ডে কেয়ার সেন্টারটির পরিসর আরও বাড়ানো। এখানে আমরা শিশুদের খেলাধুলার জন্য সব রকম আয়োজন করেছি। মায়েরা যেন তাদের সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারে সে রকম পরিবশে তৈরি করেছি। একজন আয়া রাখা হয়েছে। তিনি বাচ্চাদের দেখে রাখেন।’