বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইরান বিক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ যে ৩ নারী

  •    
  • ১৪ অক্টোবর, ২০২২ ২২:১০

নারী স্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সেপিদেহ রাশনো, মাহসা আমিনি এবং নিকা শাকরামির অসীম সাহসিকতা পরিবর্তনের অনুঘটক হতে পারে।

২০২২ সালের জুলাইয়ে তেহরানের একটি বাসে দুই নারীর মধ্যে ঝগড়ার একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, পুরোপুরি হিজাব করা নারীটি হিজাব ছাড়া অপর নারীর ওপর হামলে পড়েছেন। হিজাবহীন ওই নারীর নাম সেপিদেহ রাশনো, বয়স ২৮। ইরানের আইনে হিজাব করা বাধ্যতামূলক। তা না করলে জরিমানা গুনতে হয়, এমনকি জেলেও ঢুকানো হয়।

ভিডিওটি ভাইরাল হলে রাশনোকে গ্রেপ্তার করে ইরানের পুলিশ। পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তাকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়।

পরের কয়েক সপ্তাহে ইরানে নারীর স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠেন সেপিদেহ রাশনো। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাংবাদিক নেগার মুর্তজাভি বলেন, ‘রাশনোর গ্রেপ্তার অনেক নারীর কাছে টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এসব নারী নৈতিকতা পুলিশ এবং বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে অনেক বছর ধরেই লড়াই করছিলেন।

‘আসলে রাশনোকে গ্রেপ্তার করে সরকার হিজাব বিরোধীদের শক্ত বার্তা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছরের মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর কয়েক দশক ধরে জমতে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।’

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। সেদিন হাসপাতালের সামনে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান মাহসা আমিনি

নারীরা তাদের মাথার স্কার্ফ পুড়িয়ে, চুল কেটে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কেবল তা-ই নয়, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসনের অবসানের দাবিতে রাজপথে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন হাজার হাজার নারী; যা বিরল।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর থিঙ্কট্যাঙ্ক টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউটের ইরান প্রোগ্রামের প্রধান কাসরা আরাবি বলেন, ‘মাহসার নির্মম হত্যাকাণ্ড ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অধীনে জীবনের নির্মম বাস্তবতাকে উন্মোচিত করেছে।

‘ইরানে এর আগেও নারীরা বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে এবারের প্রতিবাদ কোনো সংস্কারের বিষয়ে নয়, এটি সরাসরি শাসন পরিবর্তনের বিষয়ে। কারণ ইসলামি প্রজাতন্ত্রে বাধ্যতামূলক হিজাব কেবল এক টুকরো কাপড় নয়। এটি এই শাসনের আদর্শের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।’

চলমান বিক্ষোভের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর একটি হলো, স্কুলছাত্রীদের হিজাববিরোধী আন্দোলনে সামিল হওয়া। বাধ্যতামূলক হিজাব করার প্রতিবাদে স্কুলপ্রাঙ্গণ থেকে কর্তৃপক্ষকে বের দেয়া, ক্লাসরুমে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ লেখা ঝুলানো...সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সাংবাদিক মুর্তজাভি বলেন, ‘স্কুল থেকে বহিস্কার কিংবা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে স্কুলছাত্রীদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক সাহস লাগে। ছাত্রীরা সেটি করে দেখাচ্ছে।’

Protesting students, chasing away an #Iranian official from their school, shouting: Shame on you…October 3rd… #MahsaAmini pic.twitter.com/eFmRhvaN2H

— Rana Rahimpour (@ranarahimpour) October 3, 2022

এই বিক্ষোভে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত শত শত ইরানির একজন নিকা শাকারামি। ১৬ বছর বয়সী কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। কীভাবে এবং কখন সে মারা গেছে তা নিয়ে বিভ্রান্তিকর এবং পরস্পরবিরোধী খবর ছড়াচ্ছে। শাকারামির মৃত্যুর বিষয়ে মুখ না খুলতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

শাকারামির মা বলেন, ‘ও ফোন করে জানিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী তাকে ধাওয়া করেছে। এরপর তার ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাকে হাসপাতাল এবং থানায় খুঁজতে গিয়েছিলাম। তারা সবাই আমাদের জানায়, এই নামের কেউ নেই। এর মধ্যেই তার গান আর কৌতুকগুলো গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।’

৯ দিন পর, পুলিশ তার মাকে ছবি দেখিয়ে নিশ্চিত করে যে ছবিতে মরদেহটি শাকারামির। শাকারামির মা বলেন, ‘ওর গাল ভেঙে গেছে, দাঁত ভেঙে গেছে। মাথার পেছনে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিল, খুলি ফেটে গিয়েছিল।’

ইরানের সানন্দাজ শহরে খোলা মাথায় বিক্ষোভকারী এক নারী

ইরান সরকার জানায়, শাকারামিকে একটি ভবনের ওপর থেকে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এতেই তার মৃত্যু হয়। এটি একটি অপরাধমূলক ঘটনা; বিক্ষোভ বা নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। শাকারামি মৃত্যুর সনদে লেখা হয়, শক্ত কিছুতে একাধিক আঘতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলী আনসারির বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তরুণ বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু কিংবা গ্রেপ্তারের মধ্যেই স্কুলভবন থেকে ছাত্রীরা হিজাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছে। এটা শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে ‘বড় ধরনের দ্বিধা’ তৈরি করেছে। নিরাপত্তা বাহিনী ওইসব স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে কি করতে যাচ্ছে? এতোগুলো স্কুলছাত্রীকে তারা গুলিও করতে পারছে না।

আরাবি বলেন, ‘গত ৪৩ বছর ধরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র তার কট্টরপন্থী মতাদর্শ লালন করার একটি উপায় হিসেবে স্কুলগুলোকে ব্যবহার করেছে। শাসনকে সমর্থন করার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তবে স্কুলছাত্রীদের প্রতিবাদ এটাই প্রমাণ করেছে যে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর