বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নারী শিক্ষককে চরিত্রহীন ও অসৎ আখ্যা তাকে বদলীর নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শাখা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুস সালাম সই করা ওই চিঠিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
তদন্তের আগেই কীভাবে অভিযুক্তকে চরিত্রহীন আখ্যা দেয়া হয়- সে প্রশ্ন তুলেছেন অভিযুক্ত ওই নারী শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষকরা। তারা বলছেন, অভিযোগকারী হিসেবে যে ব্যক্তির নাম এসেছে, সে নামে কোনো শিক্ষক ওই প্রতিষ্ঠানে নেই। এমনকি অভিযোগের বিষয়েও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য চিঠিতে বলা হয়নি।
নারীর মর্যাদার বিষয়টি সম্মুন্নত রাখার সম্পাদকীয় নীতির কারণে শিক্ষকের নাম প্রকাশ করছে না নিউজবাংলা।
কলেজের কথিত খণ্ডকালীন শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গত ১০ অক্টোবর চিঠিটি ইস্যু করেছে। সেটি বুধবার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন।
চিঠির শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘চরিত্রহীন, অসৎ ... কে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অন্যত্র বদলি সংক্রান্ত।’
এতে লেখা হয়েছে, ‘উপযুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক জনাব মো. আনোয়ার হোসেন কর্তৃক একই প্রতিষ্ঠানের ... এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগটি তদন্তপূর্বক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
চিঠি পেয়েই তিনি কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা করেছেন। সভায় এমন নির্দেশনার নিন্দা জানিয়েছেন কলেজের সব শিক্ষকরা।
অধ্যক্ষ জাকির হোসেন বলেন, ‘উপসচিবের সই করা ওই চিঠিতে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে চরিত্রহীন ও অসৎ বলা হয়েছে, যা একেবারে নিন্দনীয়। চিঠির ভাষাগত ব্যবহার আক্রমণাত্মক ছিল। চিঠিতে অভিযোগকারী হিসেবে যাকে উল্লেখ করা হয়েছে ওই নামে প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক নেই।
‘চিঠিতে শিক্ষককে চরিত্রহীন এবং অসৎ উল্লেখ করাটা কখনোই মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের কাম্য নয়। একটি উড়োচিঠি পেয়ে একজন শিক্ষকের সম্মান ক্ষুণ্ন করার অধিকার মন্ত্রণালয়েরও নেই। তাই আমরা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা করে এর নিন্দা জানিয়েছি এবং ওই চিঠি সংশোধনের দাবি জানিয়েছি।’
চিঠিতে সই দেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন নামের একজন অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষক চরিত্রহীন এবং অসৎ।
‘আমরা তার অভিযোগটি তদন্তের জন্য ডিজি অফিসকে চিঠি দিয়েছি। ওই চিঠিতে অভিযোগকারীর আনিত অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে অসৎ ও চরিত্রহীন লিখেছি। এটা আমাদের ভাষা নয়, অভিযোগকারীর ভাষা।’
অভিযোগকারী কে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন নামের একজনের নাম উল্লেখ করা রয়েছে। তিনি বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের খণ্ডকালীন শিক্ষক- এমনটি উল্লেখ রয়েছে। এর বেশি কিছু নেই।’
এমন চিঠিতে অভিযুক্ত শিক্ষকের সম্মানহানি হয়ে থাকলে তা সংশোধন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে ওই নারী শিক্ষক বলেন, ‘আমরা এর আগে সবসময় দেখেছি কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত হলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- অভিযোগকারীর অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে। কোনো চিঠির বিষয়ে কখনোই উল্লেখ করা হয় না অভিযোগকারী কী লিখেছেন।
‘তবে মন্ত্রণালয় ১০ অক্টোবর যে চিঠি ইস্যু করেছেন, সেখানে সরাসরি আমাকে চরিত্রহীন এবং অসৎ তারাই ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে আমাকে অন্যত্র বদলির নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত। কারণ যিনি অভিযোগকারী, তাকে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী চেনেন না।
‘অথচ তার পরিচয় দেয়া হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। মন্ত্রণালয়ের আগে আলোচনা করা উচিত ছিল প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে। এরপর সাবলীল ভাষায় চিঠি ইস্যু করা উচিত ছিল। আমার যে মানহানি হয়েছে তাতে আমি এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দেব।’