বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধর্ষণে ‘সম্ভ্রমহানি’র প্রচারে বিপন্ন নারী

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২২ ২০:৩৩

জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে কথিত সম্ভ্রমহানির বিষয়টি সামনে এনে নারীকে আরও বিপন্ন করে তোলা হয়। এর মাধ্যমে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধটি হালকা হতে থাকে। ধর্ষণে অভিযুক্তও এক ধরনের দায়মুক্তির সুযোগ পান।

ধর্ষণের শিকার নারীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির দেয়া এক বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা।

তারা বলছেন, সমাজে কথিত সম্ভ্রমহানির বিষয়টি সামনে এনে ধর্ষণের শিকার নারীকে আরও বিপন্ন করে তোলা হয়। এর মাধ্যমে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধটি হালকা হওয়ার পাশাপাশি ধর্ষণে অভিযুক্তও এক ধরনের দায়মুক্তির সুযোগ পান।

কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে সোমবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিষয়টি সামনে আনেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘কুকুর কামড় দিলে সম্ভ্রম যায় না, কিন্তু ধর্ষণের শিকার হলে সম্ভ্রম যায়! নিশ্চয় সম্ভ্রম নারীর কোনো বিশেষ অঙ্গে থাকে না। অতএব ধর্ষণের সঙ্গে সম্ভ্রমের কোনো সম্পর্ক থাকা উচিত নয়।’

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, আমি কখনই মনে করি না তাদের সম্ভ্রমহানি হয়েছিল। তাদের একদল পশু নির্যাতন করেছিল। তাদের যদি কুকুরে কামড় দিত তাহলে নিশ্চয় আমরা বলতাম না সম্ভ্রমহানি হয়েছিল।’

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে (ধর্ষণ) তো মেয়ের ইচ্ছাতে কিছু হয়নি। এখানে তার কোনো দোষ নেই। তাহলে কেন সম্ভ্রমহানি শব্দটা আসবে? এখানে সে কোনোভাবেই দায়ী নয়। এখানে সম্ভ্রমহানির বিষয় থাকলে সেটা অবশ্যই ছেলেটার।’

সমাজ এ ধরনের প্রচার শক্তিশালী করেছে বলে মনে করছেন অধ্যাপক তানিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করি, তারা মনে করি বিয়ের পর এই সম্পর্ক (শারীরিক) জায়েজ। এখন যে সম্পর্কে আমার কোনো মত ছিল না, আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বা জোর করা হয়েছে সেটা কখনোই সম্ভ্রমহানি নয়।’

অধিকারকর্মী খুশী কবিরও মনে করছেন, কোনো নারীকে যখন ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় তখন ওই নারীর নয়, বরং পুরুষটির সম্ভ্রমহানি ঘটে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে মেয়ে তো অ্যাকটিভ পার্টিসিপেন্ট নয়। কাউকে যখন হত্যা করা হয় বা হত্যার চেষ্টা করা হয় সেখানে যিনি এর শিকার তাকে তো কেউ দোষ দেয় না। তাকে কেউ সমাজচ্যুত করছে না বা বলছে না যে তোমার সম্ভ্রমহানি হয়েছে।

‘অথচ যিনি ধর্ষণ শিকার হন সমাজ ও পরিবার তাকেই বেশি ব্লেইম করে থাকে। ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে হয়। তার মানে বিয়ের অর্থ আর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এটা সবচেয়ে বড় সমস্যা।’

খুশি কবির বলেন, ‘একটা মেয়ের সম্ভ্রম কেন তার শরীরে থাকবে, সেটা থাকে তার ব্যক্তিত্বে। যে ধর্ষণ করেছে তাকে পয়েন্ট করতে হবে, কিন্তু সেটা করা হয় না।’

আমরাই পারি-এর প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্ষণ মানে মানুষকে শারীরিক আঘাত, মানসিক আঘাত, কিন্তু এর অর্থ এমন না যে আমার শরীরের সঙ্গে আমার সম্মান জড়িত।’

যুগে যুগে ধর্ষণকে ‘সম্ভ্রমহানি’ হিসেবে প্রচারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একই জিনিস যখন ছেলেদের ক্ষেত্রে হচ্ছে যেটা বলাৎকার, সেখানে কিন্তু সম্ভ্রম শব্দ যুক্ত করা নেই। এ ক্ষেত্রে যেটা হয় ট্রমাটা থেকে যায়, কিন্তু ছেলেটার জীবন নষ্ট হয় না। তাকে স্টিগমাটাইজড করা হয় না।’

তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে কথিত সম্ভ্রমকে যুক্ত করে তার জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয় জানিয়ে জিনাত আরা হক বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা ধারণা আছে যে, মেয়েদের ভার্জিন থাকতে হবে। সতী থাকতে হবে। আর এই সতী থেকেই সম্ভ্রম এসেছে। আর কথিত সতিত্ব নষ্ট মানেই সম্ভ্রমহানি হওয়া। এটা অনেকটা অনার কিলিংয়ের মতো।’

এ বিভাগের আরো খবর