প্রবাস থেকে টাকা পাঠিয়েছেন স্বামী, জমেছে প্রায় ১০ লাখ। স্বামীর ইচ্ছে ছিল, সুন্দর একটি বাড়ি করবেন। কিন্তু বাড়ি না করে সেই টাকা দিয়ে তিনি শুরু করেন ফলের বাগান।
প্রতিবেশীরা সতর্ক করছিলেন, যদি বাগান করে ব্যর্থ হন তাহলে স্বামী-সংসার হারাতে হবে। তবে ঝুঁকি আর কঠোর পরিশ্রমে সংসার রাঙিয়েছেন তিনি। এ গল্পটা কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার চাঁদসার গ্রামের নাছিমা বেগমের। স্বামীর পাঠানো বাড়ির টাকা কাজে লাগিয়ে বাগান গড়েছেন। সেই বাগানের আয়ে কিনেছেন জমি, করেছেন বাড়ি।
এর মধ্যে স্বামী মোহাম্মদ আলী ফিরেছেন দেশে। আর যাবেন না বাইরে। স্ত্রীর বাগানেই কাজ করে সময় কাটে।
২০১৯ সালে শুরু করা এই উদ্যোগে নাছিমা বেগম নিজের পাশাপাশি রাঙিয়েছেন অন্যের জীবনও। তার থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে বাগান করেছেন ৫০ জনের বেশি।
নাসিমার ড্রাগন বাগানে গিয়ে দেখা যায় তিনি, মোহাম্মদ আলী এবং আরও চারজন সহকারী ড্রাগন কাটছেন। বালতি ভর্তি ফল নিয়ে রাখছেন ঘরে। সেখান থেকে গিয়ে কিনে আনছেন পাইকাররা।
এই পাইকারদের কেউ চান্দিনা সদর, কেউ এসেছেন কুমিল্লা নগরী থেকে। স্থানীয়রাও কেনেন ফল। কয়েকজনকে দেখা গেল খুচরা কিনে কেটে খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
নাছিমা বেগম বলেন, ‘স্বামী বিদেশে ছিলেন। কতদিন আর কাজ করতে পারবেন? তাই ভাবলাম স্থায়ী একটা আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। স্বামীকে ফোনে জানালে তিনিও সায় দেন। তবে প্রতিবেশীরা অনেক কটূ কথা বললেন। বলে গাছের ডাল লাগিয়ে যদি ব্যর্থ হই তাহলে আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে দেবে, সন্তানরা অসহায় হয়ে পড়বে।’
নাছিমা বলেন, ‘আমি সবার কথা শুনেছি। তবে মনের ভেতরে তাদের কথাগুলোকে স্থান দেই নাই। আমি আমার মনের কথাগুলো শুনেছি। হাড় ভাঙা পরিশ্রম করেছি। এখন মনে হচ্ছে প্রতিবেশীদের কথা শুনলে আমার স্বপ্ন পূরণ হতো না।’
নাছিমা জানান, বাগান করতে তিনি চারা সংগ্রহ করেন নাটোর থেকে। শুরুতে চাষ করেন ৮০ শতক জমিতে। খরচ হয় ১০ লাখ টাকার মতো। প্রথম বছরে ফল আসে দেড় লাখ টাকার। পরের বছরে পান ৫ লাখ টাকা। তৃতীয় বছরে ৪০ শতকের আরও দুইটি জায়গা কিনে বাগান বাড়ান। এই বাগান করতে তেমন খরচ হয়নি, কেবল শুধু পিলার গাড়তে গেছে কিছু টাকা।
চলতি বছর বিক্রি ১২ লাখ টাকা। প্রতি কেজির পাইকারি দাম ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা। সেদিনও বিক্রি হয়েছে ২০০ কেজি ফল।
নাছিমার স্বামী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ড্রাগনের আয়ে আমাদের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। আমরা সুখে আছি।’
চান্দিনার কাদুটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, ‘নাছিমা বেগম দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছে করলে নারীরাও এগিয়ে যেতে পরেন। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার দেখাদেখি অনেকে ড্রাগন চাষে এগিয়ে এসে সফল হয়েছেন।’
উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুল হক রোমেল বলেন, ‘নাছিমা বেগম চান্দিনার প্রথম ড্রাগন চাষি। তার দেখাদেখি মাইজখার ও হারংয়ে আরো দুইটি ড্রাগন বাগান হয়েছে। ড্রাগন চাষ বাড়ায় ভোক্তারা আগের থেকে কম দামে ফল কিনতে পারছেন।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে বাণিজ্যিক কৃষির কথা বলি নাছিমারা সেইগুলো বাস্তবায়ন করছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ব্লক সুপারভাইজারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া আছে কৃষি উদ্যেক্তাদের পাশে থেকে পরামর্শ দেয়া। তাদের সমস্যা শুনে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া। সব কথার মূল কথা হলো বাণিজ্যিক কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ আমাদের অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক খবর।’