বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোনো উৎসবে ছুটি নেই সংবাদমাধ্যমে

  •    
  • ৬ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৩৭

হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয় দশমী, জন্মাষ্টমী, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন ও বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমায় সরকারি ছুটি থাকলেও এসব দিনে সংবাদপত্রে সার্বজনীন কোনো ছুটি নেই। টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমেও এর ব্যতিক্রম নেই।

দেশের সংবাদমাধ্যম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার নিয়ে কথা বললেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসবে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ছুটি নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সংবাদকর্মীরা তাদের ধর্মীয় উৎসবে সরকার ঘোষিত ছুটির দিনে ‘ঐচ্ছিক’ ছুটি ভোগ করার সুযোগ পান। তবে সংবাদমাধ্যমে এসব দিনে সার্বজনীন কোনো ছুটি নেই।

সংবাদপত্রে ধর্মীয় উৎসবের ক্ষেত্রে ৯ দিনের ছুটি রয়েছে, তবে সবগুলোই ইসলাম ধর্মকেন্দ্রিক। আর টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য ধর্মীয় উৎসবকেন্দ্রিক ছুটির নিয়ম প্রতিষ্ঠান ভেদে আলাদা। তবে সেখানেও হিন্দু. বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মের কোনো উৎসবে ওই ধর্মের অনুসারী ছাড়া অন্যদের ছুটি ভোগ করার সুযোগ নেই।

সংবাদপত্রে ছুটির বিষয়টি মূলত সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার’স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ বা নোয়াব নির্ধারণ করে। নোয়াবের সিদ্ধান্ত অনুসারে বছরে ১১দিন বন্ধ থাকে সংবাদপত্র প্রকাশনা।

এই ১১ দিনেরমধ্যে ৯ দিনই ইসলাম ধর্মকেন্দ্রিক ছুটি। এগুলো হলো: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ৩ দিন করে ৬ দিন, ঈদে মিলাদুন্নবিতে একদিন, শবে বরাতে একদিন এবং আশুরাতে একদিন। এছাড়া পহেলা বৈশাখে একদিন ও মে দিবসে একদিন ছুটি রয়েছে।

এর বাইরে জাতীয় তিন দিবসে সরকারি ছুটি থাকলেও এসব দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় পত্রিকা বের করা হয়।

অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয় দশমী, জন্মাষ্টমী, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন ও বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমায় সরকারি ছুটি থাকলেও এসব দিনে সংবাদপত্রে সার্বজনীন কোনো ছুটি নেই। টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমেও এর ব্যতিক্রম নেই।

বিষয়টিকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি ছুটি দিতে হয় সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে ছুটি থাকা উচিত। আর যদি ছুটি না দেয়, যেহেতু গণমাধ্যম প্রতিদিন মানুষের দোরগাড়ায় যায়, সেক্ষেত্রে ছুটি বাতিল হলে নিজস্ব উদ্যোগে পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

‘এক সম্প্রদায় ধর্মীয় ছুটি পেল, অন্য সম্প্রদায় পেল না এটা শোভন নয়। এটা এক ধরনের সাম্প্রদায়িকতা বলে আমি মনে করি।’

সাংবাদিক সংগঠন থেকে কখনও বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে এ ধরনের দাবি কখনও জানানো হয়নি। সাংবাদিক সংগঠনগুলো আলোচনা করে গণমাধ্যমের মালিক, কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিডিয়ায় এ ছুটিগুলো যখন নির্ধারণ করা হয় তখন মিডিয়া মূলত সংবাদপত্র ও এজেন্সি নির্ভর ছিল। অর্থাৎ সব অফলাইনের ছিল।

‘এখন কালের বিবর্তনে অনলাইন পত্রিকা, নিউজ এজেন্সি, অনলাইনে টেলিভিশন এগুলো সব ২৪ ঘণ্টার হয়ে গেছে। মিডিয়া এখন অত্যাবশ্যকীয় সেবার আওতায় এসে গেছে। ঈদের দিনেও মানুষ সংবাদ দেখতে চায়।‘

তিনি বলেন, ‘তবে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন মিলিয়ে গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তাদের ছুটির পরিমাণ বাড়ানো উচিত। নির্ধারিত উৎসবের দিনেই ছুটি নিতে হবে বিষয়টি তেমন নয়। আলোচনার মাধ্যম আগে পিছে করে ছুটি নেয়া উচিত।’

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব ধর্মীয় উৎসবে ছুটি একসময় সংবাদমাধ্যমে ছিল। তবে কালের পরিক্রমায় দেখা যায় হিন্দু বা অন্য সম্প্রদায়ের কোনো ধর্মীয় ছুটি নেই। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

‘আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলি, সব ধর্মের সমন্বয়ের কথা বলি, সব ধর্মের সমান সযোগের কথা বলি, অথচ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের উৎসবে কোনো ছুটি নেই।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো এক ধরনের বৈষম্য তৈরি করে। কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। সংবাদপত্রে ছুটি তো সরকার নয়, নোয়াব নির্ধারণ করে। তারা কেন এগুলো বিবেচনা করে না আমি ঠিক জানি না।

‘বাংলাদেশে এখন অধিকাংশ ওনার বা মালিকরাই সম্পাদক। তারা চাইলে এ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে।’

নোয়াব থেকে কখনও অন্য ধর্মের উৎসবে ছুটির বিষয়ে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি জানিয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বিজয় দশমী, বুদ্ধপূর্ণিমা ও বড়দিনে একদিন করে ছুটি থাকা দরকার্। এ ব্যাপারে নোয়াবকে কখনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারাও কখনও উদ্যোগ নেননি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে নোয়াব সভাপতি ও সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে নোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমানে সদস্য দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কখনও অন্য সংবাদমাধ্যমকে কমেন্ট দিই না। আমি কোনো বিষয়ে আমার যেটা বক্তব্য সেটা নিজের কাগজে লিখি, নিজের কলমে লিখি। তাই সচারচর আমার কোনো মন্তব্য অন্য কোথাও দেখবেন না।’

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা অবশ্য মনে করছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসবে সংবাদমাধ্যমে সবার জন্য ছুটি থাকার যৌক্তিকতা নেই।

গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণমাধ্যম কর্মীরা ছুটির জন্য চাকরি করেন না। তারা জানেন এটা একটা অন্যরকম পেশা। অন্য পেশা থেকে আলাদা, এখানে সময় বেশি দিতে হয়, কাজের পরিবেশ ও ঝুঁকিও বেশি।

‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, গণমাধ্যম জরুরি সেবার আওতায় পড়ে। জরুরি সেবার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসা, পরিবহন, আইনশৃংখলা বাহিনী এদের মতো গণমাধ্যমকেও সবসময় ছুটি দেয়া যায় না। আমি মনে করি, সেই বিবেচনায় গণমাধ্যম সব ছুটি পাবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’

তিনি বলেন, ‘টেলিভিশনে ঈদের দিনও কাজ করা হয়। সংবাদপত্র বন্ধ থাকলেও তাদের অনলাইন ভার্সন চালু থাকে। সেখানে গণমাধ্যম কর্মীদের কাজ করতে হয়।

‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে সবাই কিন্তু সব ধর্মীয় উৎসবে ছুটি দিচ্ছে না। বড়দিনে ছুটি দেয়া হয়। কারণ এটা তাদের বড় ধর্মীয় উৎসব। তেমনি আমাদের এখানে ঈদে বড় ছুটি দেয়া হচ্ছে। অন্য ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিনে স্ব স্ব ধর্মালম্বীদের ছুটি দেয়া হয়।’

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মীয় কারণে আমরা যে অনেকগুলো ছুটি কাটাই সেগুলো সংক্ষিপ্ত করা উচিত। এর পরিবর্তে জাতীয় উৎসব হিসেবে ঈদে আর একটু বেশি ছুটি দিলে মানুষের বাড়িতে যাওয়ার ছোটাছুটি আরও সহজ করে ফেলা সম্ভব বলে আমি মনে করি।’

অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংবাদপত্রে যারা কাজ করে তারা বছরে মাত্র ১১ বা ১২ দিন ছুটি পায়। তবে অনলাইন গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তাদের ঈদের দিনেও কাজ করতে হয়। অন্য ধর্মাবলম্বীদের নির্ধারিত ছুটি না থাকলেও তাদেরকে স্ব স্ব অফিস ছুটি দেয়।

‘তবে এসব ছুটির একটা নীতিমালা থাকা উচিত। অন্তত দুর্গাপূজায় একটি দিন ছুটি দেয়া উচিত। কারণ মুসলিমরা দু্ই ঈদে ছুটি পায়। সেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গা উৎসব। এজন্য গণমাধ্যমে অফিসিয়ালি একটা ছুটি দেয়া উচিত। কারণ, কাজের বাইরে পরিবারকে সময় দেয়া জরুরি।’

এ বিভাগের আরো খবর