অবিবাহিত জেনে বিবাহিত এক ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়েছিলেন প্রেমের সম্পর্কে। একপর্যায়ে হয় শারীরিক সম্পর্ক, গর্ভে আসে সন্তান। সম্পর্ক অস্বীকার করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন কথিত প্রেমিক। মেয়েটির দুচোখে তখন অন্ধকার।
অসহায় মেয়েটি দুবার ভ্রূণ নষ্টের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন, শেষপর্যন্ত জন্ম নেয় এক মেয়ে শিশু। নিজের নাড়িছেড়া ধনকে বুকে নিয়ে একদিকে মায়ের চোখে আনন্দাশ্রু, অন্যদিকে মনজুড়ে উদ্বেগ-আতঙ্ক।
শেষপর্যন্ত নবজাতককে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন মেয়েটি।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের সিঁড়ি থেকে গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় একটি নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে সময় অনেক খুঁজেও তার বাবা-মায়ের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে রাখা হয় শিশু ওয়ার্ডে।
তবে সন্তানকে চিরতরে বিসর্জন দিতে পারেননি মা। সমাজ-লোকনিন্দার ভয় উপেক্ষা করে তিন দিন পর ওই হাসপাতালে ছুটে যান। গুরুতর অসুস্থ থাকায় শিশুটির সঙ্গে তারও চিকিৎসা শুরু হয় ওই হাসপাতালে।
মেয়েটি এখন সন্তানসহ আছেন শহরের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে।
তিনি নিউজবাংলা জানান, নিজ বাড়িতেই সন্তানের প্রসব হয়। এর তিন-চারদিন পর মাকে সঙ্গে নিয়ে সদ্যোজাত সন্তানকে হাসপাতালের সিঁড়িতে ফেলে রেখে আসেন। বাবার পরিচয় না থাকায় লোকলজ্জার ভয়ে এ কাজ করেন তিনি।
নওগাঁ শহরেই মায়ের সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন মেয়েটি।
তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে শহরের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে সে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কেও জড়ায়।’
তবে গর্ভে সন্তান আসার পর সম্পর্ক অস্বীকার করেন ওই ব্যক্তি, স্বীকার করেন তিনি বিবাহিত। শহরের দয়ালের মোড় এলাকায় তার একটি মুদি ও ফ্লেক্সিলোডের দোকান রয়েছে।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের আরএমও আবু আনসার আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেদিন শিশুটিকে পাওয়া যায় তার তিন-চার দিন আগে ওর জন্ম হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এরপর প্রসূতি ও তার মা এখানে এসে শিশুটিকে ফেলে রেখে যান।
‘তারা দুজন বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকারও করেছেন। প্রসূতির শারীরিক কিছু পরীক্ষা করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে শিশুটি তার বলে আমাদের মনে হয়েছে। শিশুটিও বুকের দুধ পান করছে। বাচ্চা প্রসবের পর মায়ের দৈহিক কিছু পরিবর্তন ঘটে, সেটি তার মধ্যে দেখা গেছে।’
শিশুটি অন্য কারও হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ’আজ পর্যন্ত অন্য কেউ বাচ্চাটির দাবি করেনি। আর প্রসূতিও কিন্তু শহর ছেড়ে পালিয়েও যাননি।’
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চাটি পাওয়ার পর জেলা সমাজ সেবা অফিস ও শিশু কল্যাণ কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদারক করা হয়। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রসূতির শারীরিক কিছু পরীক্ষাও করা হয়েছে। শিশুটি বুকের দুধ পান করছে। আর অন্য কেউ শিশুটিকে নিজের বলে দাবিও করেনি। সব মিলিয়ে শিশুটি তারই সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চা ও মেয়েটি শহরের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে আছে। সে কিন্তু পালিয়ে যায়নি। এরপরেও কেউ বাচ্চাটিকে দাবি করলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে পরে তা অস্বীকারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে মেয়েটির কথিত প্রেমিকের সঙ্গে। তবে মেয়েটির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করছেন তিনি।
ওই ব্যক্তি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। সে আমার দোকানে আসত। এভাবেই তার সঙ্গে পরিচয়। এর বাইরে আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।’
এমন অবস্থায় মেয়েটি কী করতে পারেন জানতে চাইলে জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহসীন রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আইনের আশ্রয় নিতে পারে ওই মেয়ের পরিবার। মামলা হলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শিশুটির পিতৃপরিচয় পাওয়া সম্ভব।’
এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নূর মুহাম্মদ বলেন, ‘জেলা সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সামনে আরও সহযোগিতা করা হবে।’